ন্যাভিগেশন মেনু

রাসেল দম্পতির ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর


অর্থ আত্মসাত মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে হাজির করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশার থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম।

শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানির সময় কাঠগড়ায় রাসেলের সাথে অন্য মামলার পুরুষ আসামি থাকার কারণে তার স্ত্রীকে সেখান থেকে নামিয়ে বেঞ্চে বসানো হয়।

এর আগে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরানো গ্রাহকদের অল্প পণ্য ফেরত দিয়ে ব্যবসা করাই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের উদ্দেশ্য ছিল।

তিনি বলেন, রাসেল গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাভারে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন নিজের নামে। এমডি ও চেয়ারম্যান আরাম-আয়েশে থাকলেও শেষদিকে কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতনও দিতো না লোকসানি এ প্রতিষ্ঠান। রাসেল জেনেশুনেই নেতিবাচক এই স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন।

তিনি জানান, চলতি বছরের গত জুন থেকে ইভ্যালির কর্মচারীদের অনেকের বেতন বকেয়া থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন পদাধিকার বলে মাসিক ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা বেতন নিয়েছেন। এছাড়া তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি (রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার করেন।

শুধু তাই নয়, কোম্পানির প্রায় ২৫-৩০টি যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সাভারে গ্রেপ্তার রাসেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসায়িক বিক্রি বাড়াতে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত চাহিদা তৈরি হয় এ ধরনের পণ্যকে বেছে নেয় ইভ্যালি। যেমন - মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরবাইক, গাড়ি, গৃহস্থলীপণ্য, প্রসাধনী, প্যাকেজ ট্যুর, হোটেল বুকিং, জুয়েলারী, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী ও ফার্নিচার ইত্যাদি। এসব পণ্যের মূল্য ছাড়ের ফলে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের বিশাল আকারে সায় (লায়াবেলিটিস) তৈরি হয়।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তার রাসেল ও তার স্ত্রীর ব্যবসায়িক অপকৌশল ছিল নতুন গ্রাহকের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে পুরাতন গ্রাহক ও সরবরাহকারীর দায়ের (লায়াবেলিটিস) অল্প অল্প করে পরিশোধ করা। অর্থাৎ ‘সায় ট্রান্সফার’ এর মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিল ইভ্যালি।

প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে যতো গ্রাহক তৈরি হতো, দায় ততো বাড়তো। গ্রেপ্তার রাসেল জেনেশুনে এ নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ইভ্যালি ছাড়াও রাসেলের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম রয়েছে সেগুলো হলো, ই-ফুড, ই-খাতা, ই-বাজার ইত্যাদি।

ইভ্যালির ব্যবসায়িক কাঠামো শুরু হয়েছিল যৎসামান্য নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে। তার ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি ছিল তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নেওয়া। তিনি বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের অফার নিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করতেন। এতে দ্রুত সময়ে ক্রেতা বাড়ানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখের বেশি। তিনি বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে এত সংখ্যক গ্রাহক সৃষ্টি করেছেন। ইভ্যালির বিভিন্ন লোভনীয় অফারগুলো হলো - সাইক্লোন অফার (বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে পণ্য বিক্রয়); ক্যাশব্যাক অফার (মূল্যের ৫০-১৫০% ক্যাশব্যাক অফার); আর্দ্রকুয়েক অফার, প্রায়োরিটি স্টোর, ক্যাশ অন ডেলিভারি। এছাড়া বিভিন্ন উৎসবেও ছিল জমজমাট অফার, যেমন- বৈশাখী, ঈদ অফার ইত্যাদি। তাছাড়া আরও রয়েছে টি-১০, ৫ ও ৩ অফার। এভাবে বিভিন্ন অফারে প্রলুব্ধ হন সাধারণ মানুষ।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়। এদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এমআইআর/এডিবি/