ন্যাভিগেশন মেনু

সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের গ্রাজুয়েটদের আবেদনের সুযোগ নেই!


পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ২২টি পদের জন্য আবেদন আহ্বান করে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে।

ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন পদে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গ্রাজুয়েটের আবেদন করার সুযোগ নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিভিন্ন পদে আবেদনের জন্য যে শিক্ষাগত যোগত্যার শর্ত দেওয়া হয়েছে তা দেখে অবাক ও হতাশ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের অনেক শিক্ষক ও গ্রাজুয়েট।

বাংলাদেশ পোস্টের সাথে আলাপকালে তারা তাদের বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগত্যার জায়গায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারিদের অন্তর্ভূক্ত করতে বিজ্ঞপ্তিটি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সুপারিনটেন্ডেন্ট (লাইট ও মুরিং) এবং হাইড্রোগ্রাফি পদে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু এই দুই পদে হাইড্রোগ্রাফি, সীমেনশিপ এন্ড নেভিগেশন এবং পোর্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স পড়া ওশানোগ্রাফির/মেরিন সায়েন্সেস গ্রাজুয়েটদের আবেদন করার কোন সুযোগ রাখেনি নিয়োগ কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (সংস্থাপন ও নিয়োগ) তায়েবুর রহমানের স্বাক্ষরিত ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সুপারিনটেন্ডেন্ট (লাইট ও মুরিং) এবং হাইড্রোগ্রাফি পদে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়েছে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধার।


সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের লোকদের আবেদনের সুযোগ না থাকায় অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সরাসরি সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের নিয়োগ বিধিতে আবেদনে অযোগ্য হলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় এসব বিষয়?

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি (সমূদ্রবিজ্ঞান) বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মুসলেম উদ্দিন মুন্না শনিবার (১ অক্টোবর) তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ”কঠিন ভর্তিযুদ্ধে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে ছাত্রছাত্রীরা এসব বিভাগে/ইন্সিটিউটে ভর্তি হয়ে ৬-৮ বছরের মেধা-পরিশ্রমের মূল্যায়নে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ব্যাংক, বীমা, গার্মেন্টস আর এনজিও-তে জব করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তাদের গড়ে উঠা যোগ্যাতা কোন কাজে লাগাতে পারে না। পরিণামে সরকারের তথা জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকায় গড়ে উঠা এসব জনশক্তি হতাশায় জাতীয় বোঝায় পরিণত হচ্ছে!”

এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের তায়েবুর রহমানকে বার বার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায় এবং অফিসের নাম্বারে কল করার পর বার বার রিং হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

গত কিছুদিন আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিন মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক মৎস্য শাখার পরিদর্শক পদেও আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি সমুদ্র বিজ্ঞানে পাশ করাদের। এই নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

ড. মুসলেম উদ্দীন মুন্না বলেন, ”আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে কিংবা বিভাগের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ওদের ভর্তি করাই, থিওরি, ফিল্ড ও ল্যাব প্রাক্টিকেল কিংবা গবেষণা করাই, আমরা কি এ দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারি? অবশ্যই না!”

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, বিভাগ, অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রান্ড কমিশন পর্যন্ত আমরা সবাই কিন্তু এসব গ্র্যাজুয়েটদের ভর্তি ও দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে তৈরি করার কাজে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এবং দায়িত্ব নিয়ে অনতিবিলম্বে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ সমস্যার সমধা্নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমূদ্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন গ্রাজুয়েট বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, ”সমূদ্রবিজ্ঞান, মেরিন সায়েন্সেস ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশুনা করার পর সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে চাকুরীর জন্য আবেদন করার সুযোগ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিষয় রাখার মানে কী? আর আমাদেরকে তাহলে এমন বিষয়ে কেন পড়তে হলো?”