ন্যাভিগেশন মেনু

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ চার জনের ৭ দিন করে রিমান্ড


পিরোজপুরে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় মাল্টিপারপাস কোম্পানি এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব আহসানসহ চার ভাইয়ের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ম. মহিউদ্দিন এ আদেশ দেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও বাদি পক্ষের আইনজীবী এম ডি নুরুল ইসলাম সরদার শাহজাহান জানান, সারাদেশে প্রতারণা করে রাগিবের পরিবার ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পিরোজপুরের আইনজীবীরা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ম. মহিউদ্দিনের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাগীব আহসান (৪১) ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে। এর আগে বিকেলে সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকা থেকে মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মো. খাইরুল বাশারকে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

জানা যায়, এহসান গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের হদিস নেই। গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি না কিনে রাগীব আহসান এবং তার আত্মীয়স্বজনের নামে জমি কিনেন তিনি। তারপর সেসব জমির ৯০ শতাংশ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন।

এ বিষয়ে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান জানিয়েছেন তিনি ১৯৮৬ সালে মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে তিনি পাস করেন। ২০০০ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর মসজিদে ইমামতি করেন।

২০০৬-২০০৭ সালের দিকে ইমামতির পাশাপাশি 'এহসান এস মাল্টিপারপাস' নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করার মাধ্যমে এমএলএম কোম্পানির আদ্যেপান্ত রপ্ত করেন রাগীব। ২০০৮ সালে 'এহসান রিয়েল এস্টেট' নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন নিজেই। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।

দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে শরিয়াহ পদ্ধতিতে সুদমুক্ত বিনিয়োগে ব্যবসার প্রচারণা চালান। নিজের এলাকা পিরোজপুরে ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করে তার এমএলএম কোম্পানিতে অংশীদার হতে আহ্বান জানান। এভাবে তিনি ১৭টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। লাখ টাকার বিনিয়োগে রাগীব মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকা প্রাপ্তির প্রলোভন দেখান। ২০০৮ সালে ১০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করতে সমর্থ হন। পরে গ্রাহকের সংখ্যা লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে যায় বলে জানতে পেরেছে র‍্যাব।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় রাগীবের তত্ত্বাবধানে ৩০০ মাঠ পর্যায়ের কর্মী ছিল। যাদের কোনও বেতন ছিল না। যদিও তাদের বিনিয়োগ আনার পরিমাণের ওপর ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিল। এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুত গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হন। কর্মী-গ্রাহক সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। কর্মী-গ্রাহকদের কাওকেই লভ্যাংশ পরিশোধ করেননি।

জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান আরও জানান, তিনি এহসান গ্রুপের অধীনে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো - এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট অ্যাকাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

সিবি/এডিবি/