ন্যাভিগেশন মেনু

অটোয়ায় মাতৃভাষা দিবস উদযাপন


কানাডার রাজধানী অটোয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

এ উপলক্ষে স্থানীয় সময় রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় হাই কমিশনের মিলনাতায়নে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনাসভায় ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য, জাতীয় চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা মা বোনদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী পাঠ করেন যথাক্রমে উপ হাই কমিশনার চিরঞ্জীব সরকার ও মিনিস্টার পলিটিকাল দেওয়ান হোসনে আইয়ুব। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভিডিও বার্তা প্রদর্শন শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বানী পাঠ করেন কাউন্সিলর (কন্সুলার) অপর্ণা রানী পাল।

এতে ফেডারেল এমপি ও কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান নাথানিয়েল এরস্কাইন স্মিথ, অণ্টারিও প্রাদেশিক পার্লামেন্ট সদস্য ডলি বেগম, বাংলাদেশের স্বনামধন্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের অন্যতম সদস্য ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত  আবদুস সালাম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়াও কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ ও টেরিটোরির প্রবাসী বাংলাদেশি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে যুক্ত হন।

আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে ফেডারেল এমপি নাথানিয়েল এরস্কাইন স্মিথ তাকে আমন্ত্রনের জন্য হাই কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি ৭০ বছর আগে ঢাকায় ভাষা অধিকার রক্ষার জন্য যারা জীবন দান করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি তিনি কানাডার বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির আলোকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি ইউনেস্কোতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের অবদানের প্রশংসা করেন।

অণ্টারিও প্রাদেশিক পার্লামেন্ট সদস্য ডলি বেগম বলেন, বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষা অধিকার আদায়ে একুশে ফেব্রুয়ারি সবসময় প্রেরণা যোগায়। এটি বাঙ্গালিদের বীরত্বের একটি স্বীকৃতি।

সভাপতির ভাষণে হাই কমিশনার বলেন, এ বছরের শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি। বঙ্গবন্ধু তৎকালীন সময়ে তাঁর বলিষ্ঠ তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় তথা বাঙ্গালি জাতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তা ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙ্গালির গৌরবময় ঐতিহাসিক দলিলে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো কালে কালে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। এতদঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের স্বার্থ সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি অর্জনের পিছনে রয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও অগনিত মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করছেন। বঙ্গবন্ধু রাজবন্দি হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় থাকাকালে রাতের অন্ধকারে সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা তাঁর সাথে দেখা করেন এবং এ সময় বঙ্গবন্ধু একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত দেন।

এ সময় তিনি সকলকে অবহিত করেন যে, এই হাই কমিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বাংলাভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে কাজ করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এর আগে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রেখে ও জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। পরে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সর্বশেষ একটি ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, কানাডা, চিন, ভারত, শ্রীলংকা ও ফ্রান্সের শিল্পীরা নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষায় গান, নাচ ও কবিতা পাঠ করেন। বিভিন্ন দেশের ও ভাষার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার যে মূল লক্ষ্য অর্থাৎ সকল ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান ও লালন করার বিষয়টি উঠে আসে। এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ত সকলে হাই কমিশনের এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এস এ/এডিবি