ন্যাভিগেশন মেনু

আমি নির্বাচন আর জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি: প্রধানমন্ত্রী


আমি নির্বাচন আর জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (৪ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় গণভবন থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

নির্বাচন দূরে হলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচন কেন্দ্রিক কর্মকান্ড এখনই শুরু করা সংক্রান্ত দলীয় প্রধানের দলীয় ফোরামে ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিটা এইজন্য যে, আমি নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আর জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি। কারণ, আমি কখনই এই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না যে, আমি এত কাজ করেছি আর আমার অপজিশন নাই। আর এটা যদি করি তবে খরগোশ আর কাছিমের দৌড়ের মত দশা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনটাকে আমরা নির্বাচন হিসেবেই দেখতে চাই। জনগণের ভোট আমরা পেতে চাই, জনগণের কাছে যেতে চাই। তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে জনগণের ভোটেই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাই। আর জনগণ যদি ভোট না দেয় আসবো না, পরিস্কার কথা। আর প্রতিপক্ষ কে হতে পারে বা পারবে না, সেটা তাদের ব্যাপার, তারা দেখবে। কিন্তু, দল হিসেবে আমাদের যে প্রস্তুতি আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই বোধ হয় একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে করে থাকে।

শুধু সাংগঠনিক কার্যক্রমই নয় তিনি বলেন, রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, দিক দর্শন বা দেশটাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কি সেই চিন্তা ভাবনা করেই আমরা কাজ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে দলকে সুসংগঠিত করা আর একদিকে ভোটের রাজনীতিতে জনগণের কাছে যাওয়া, জনগণের কাছে ভোট চাওয়া বা ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া-যেটা আমি মনে করি, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই এই কার্যক্রমটা থাকা উচিত।

তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অপরপক্ষে কে আছে না আছে (বিরোধী দল) সেটা চিন্তা না করে নিজের কার্যক্রমটা আগে করতে হবে। কাজেই, বিরোধী দলে কেউ নেই বলে আমি আত্মতুষ্টিতে বসে থাকবো না। আমার সাংগঠনিক কাজ আমাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমার কাজের মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। তাঁদের জন্য আরো কি কাজ আমি করতে পারি সেটাও এর মাধ্যমেই আমি খুঁজে পাব।

মানুষের কাছে না গেলে তাঁদের কষ্টটা কি তা জানা যায় না এবং সে কষ্টটা লাঘবের সুযোগ বা পরিকল্পনা কোনটাই থাকে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের কষ্টটা অনেক কাছ থেকে দেখেছেন এবং সেই কষ্ট লাঘবেই তাঁর দল কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, দেশটাকেও উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট ব্যবহার করে সফর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমি যে বিমানে গেছি, সেটি ড্রিমলাইনার; সবচেয়ে আধুনিক যাত্রীবাহী বিমান। বেশ অল্প টাকায় আমরা এটা কিনতে পেরেছি। এটার নামও দিয়েছি অচিন পাখি। সরকারে আসার পর বহু চেষ্টায় আমরা অনেকগুলো বিমান একসঙ্গে কিনেছি।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য, করোনার কারণে অনেক জায়গায় বিমানের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে বিমানগুলোকে পড়ে/বসে থাকতে হয়। বসে থাকলেও এর মেইনটেইনেন্স খরচ রয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম- অন্যকে টাকা দিয়ে লাভ কি? নিজেদেরটাই নিয়ে যাই। সেই সঙ্গে এটার বোয়িংও আমেরিকান কোম্পানির, আর জেএফকেতেও নামবে, এটাও আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। মাঝে রিফুয়েলিংয়ের জন্য আমরা ফিনল্যান্ডে অবতরণ করি।

তিনি আরও বলেন, জেএফকেতে আমাদের একটা স্লট ছিল অবতরণের। আপনারা জানেন- বিএনপির আমলে দুর্নীতি ও নানা অপকর্মের কারণে বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল, জরাজীর্ণ হয়ে গেছিল। আমি এসে যখন নতুন বিমান কিনলাম, আমাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল- ওই অবতরণের স্লটটা ধরে রাখা। তাছাড়া আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম রয়েছে সেগুলো ফলো করে আমরা কিছু আইনও করেছি। বোস্টনে গতকাল একটা সভাও হয়েছে। টরেন্টো-নিউইয়র্কসহ আরও কয়েকটি জায়গায় যাতে যেতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। এই বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি ১৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্ক পৌঁছাতে পারে। এর পরিচালন-ক্ষমতা ১৭ ঘণ্টার ওপরে বলে জানান তিনি।

সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, সেটা তাদের মুখেই থাকবে। আমাদের চেষ্টা- দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা। আন্তর্জাতিক মর্যাদায় যেন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে সেই কাজই করছি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অডিও রেকর্ড নিয়ে দেশজুড়ে যে তোলপাড় হচ্ছে তাকে বহিষ্কারের বিষয়ে যে আন্দোলন চলছে এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তো কতোভাবেই কতকিছু হয়। তবে তার বক্তব্যের ব্যাপারে তাকে দল থেকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সে দেশের সরকার দেখবে, আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। এটা নিশ্চয়ই একটা গর্হিত কাজ।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এর সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনসহ সরকার এবং পিএমও’র উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সাংবাদিকদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন যারা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন।