ন্যাভিগেশন মেনু

জলদস্যুদের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে জিম্মি নাবিক-জাহাজ উদ্ধার করতে চায় মালিকপক্ষ


বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা জাহাজে কারো অভিযান চালানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন এমভি আব্দুল্লাহ’র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধার জন্য প্রস্তুতির যেসব তথ্য গণমাধ্যমে আসছে পুরোপুরি সঠিক নয়। জাহাজ মালিকপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন অভিযান হতে পারে না।  নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে যাচ্ছি না। জলদস্যুদের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। এখনও কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করেননি। জলদস্যুরা যখনই আলাপ, আলোচনা করতে চাইবে, তখনই আমাদের কার্যক্রম শুরু করে দিবো। এতে জাহাজ উদ্ধার ও ২৩ নাবিককে সুস্থভাবে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। আমরা সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মালিকপক্ষ চেষ্টা করছে। জিম্মি নাবিকদের স্বজনরা নিয়মিত মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ 
করছে । তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও শান্তনা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, জলদস্যুদের কবলে থাকা জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারে আলোচনা চলমান। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরও সময় লাগবে। এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি এলাকায় ইইউ নেভির যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি জিম্মিদের মুক্তির আলোচনায় প্রভাব ফেলবে না। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা শুরু করেছি আমরা। নাবিকদের জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। দর-কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছালে জাহাজ-নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে।

এদিকে সোমালিয়ার উপকূলে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে পাঁচ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। আবার জিম্মি জাহাজ থেকে স্থলভাগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি সোমালি। 

বাংলাদেশি জাহাজটির মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তবে জলদস্যুরা তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। তবে তৃতীয় পক্ষটি কারা সে বিষয়ে মালিকপক্ষ কিছু জানায়নি।

নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, চরম উৎকণ্ঠায় থাকা জিম্মি জাহাজের নাবিকদের পরিবারের লোকজনও ফোনে যোগাযোগের খবরে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। জলদস্যুরা বর্তমানে চারিদিকে চাপে রয়েছে। জলে ও স্থলে জলদস্যুদের ওপর দৃশ্যত চাপ বাড়ছে। এতে জিম্মিদের মুক্ত করতে জলদস্যুরা দ্রুত সমাধানে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে, এতে সমাধানও তাড়াতাড়ি হতে পারে। জলে-স্থলে এসব চাপ জলদস্যুরা কীভাবে নিচ্ছে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ওই অঞ্চলে নিয়মিত টইল দিয়ে থাকে। সোমালিয়া উপকূলে তাদের জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তার জন্য তাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জিম্মি জাহাজ উদ্ধারে ইইউ যুদ্ধজাহাজের কোন সম্পর্ক নেই। জাহাজে একটি স্যাটেলাইট ফোন আছে, যার মাধ্যমে মালিকপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব। কিন্তু জলদস্যুরা মালিকপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না করে তৃতীয় একটি পক্ষ মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।  

জাহাজের স্যাটেলাইট ফোন থেকে কল দিয়েছিল দস্যুরা। সিম ব্যবহার করে ফোন দিলে ট্র্যাকিং হতে পারে বা মালিকপক্ষের চেয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করা, আলাপ-আলোচনা বিষয়টি জলদস্যুরা সহজ মাধ্যম মনে করেন।  এই আলোচনার মাধ্যমে একসময় শান্তিপূর্ণভাবে জিম্মি জাহাজ-নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে। তবে সেটা অনেকক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

তাছাড়া ভারত মহাসাগরে গত কয়েক দশকে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। এ কারণে এ জলপথ ব্যবহার করে পরিচালিত পণ্য পরিবহন ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে জলদস্যুদের কাছে বিষয়টি ব্যবসা হিসেবে দেখছে তারা। অনেক সময় দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকেরা এমনটাই জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুদের কাছে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক-ক্রু।

এর আগে ২০১১ সালেও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। দীর্ঘ তিন মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়।