ন্যাভিগেশন মেনু

ঠাকুরগাঁওয়ে শতাধিক ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ


সবজি গ্রামের কৃষকরা কমপক্ষে ১০টি দেশে সবজি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও তাদের সেই সাফল্য ফিকে হতে বসেছে। সবজির ক্ষেতের পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় এবং সে ভাটায় অবাধে লাকড়ি পোড়ানোর কারণে সবজি গাছের জীবনকাল কমে গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে গাছপালা বিবর্ণ হয়ে ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। সবজির পাশাপাশি মৌসুমী ফলের বাগানেও দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রভাব।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চামেশ্বরী গ্রামের শিক্ষিত যুবক মেহেদী আহসান উল্লাহ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে চাকুরির পেছনে না ঘুরে কৃষিতে মনোনিবেশ করেন। বড়দেশ্বরী এলাকায় নিজের জমিতে সবজির বাগানের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন আম কাঠাল লিচুসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে তিনি আধুনিক প্রযুক্তি খাটিয়ে সবজির আবাদ শুরু করায় তার হাতে ধরা দেয় সফলতা। জৈব পদ্ধতিতে সবজির আবাদ করায় তার সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১০টি দেশে রপ্তানি হয়। তার  সফলতা দেখে বড়দেশ্বরী ও মলানী গ্রামের প্রায় দুইশতাধিক কৃষক এখন সবজির আবাদ করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন।

ইতোমধ্যে এলাকাটি 'সবজির গ্রাম' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে  শুরু হয় এখান থেকে সবজি সংগ্রহ। প্রত্যহ অসংখ্য ট্রাকে করে করলা, লাউ, শশা, বেগুন, ঝিঙ্গা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি,আলুসহ বিভিন্ন সবজি যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

কিন্তু সবজির গ্রামে একটি ইটভাটা স্থাপিত হওয়ার পর থেকে সবজির উৎপাদন মারাত্বকভাবে কমে গেছে বলে অভিযোগ করেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী কৃষক মেহেদী আহসান উল্লাহ।

তার মতে, ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও বর্জ্যের ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত  ছড়িয়ে পড়ায় কৃষির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে সবজি ক্ষেতের জীবনকাল অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায়। এহেন অবস্থায় নিজেদের জমিতে এখন সবজি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একই এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও জানান একই কথা।

আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও এই ভাটার ৫০ গজের মধ্যে রয়েছে একটি আশ্রয়ন প্রকল্প।মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নির্মাণাধীন রয়েছে ৮৭টি পরিবারের  জন্য বসবাসযোগ্য এই আবাসন প্রকল্প। পাশে রয়েছে বড়দেশ্বরী বাজার ও বড়দেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়।

প্রতিদিন অসংখ্য মাহিন্দ্র ট্রাক্টরযোগে বাইরে থেকে মাটি ও লাকড়ি ভাটায় আনা নেওয়া ও ইট পরিবহনের কারণে ধুলায় রাস্তাঘাট ও বাজার এলাকা ধুসরিত হয়ে থাকছে। এতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সবজির গ্রামের পাশের এই ভাটার ন্যায় জেলার বেশিরভাগ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকা ঘেঁষে কিংবা আবাদী জমিতে কিংবা স্কুল প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে। এগুলোর বেশিরভাগেরই নেই ভাটা স্থাপনের লাইসেন্স। জেলায় ১৩০টির মতো ইটভাটা থাকলেও লাইসেন্স রয়েছে মাত্র হাতেগুনা কয়েকটির। অবশ্য মাঝে মাঝে এসব অবৈধ ইটভাটায় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অর্থদণ্ড করে থাকেন।

সম্প্রতি ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠখড়ি ব্যবহার করার অপরাধে থ্রি ষ্টার ব্রিকস নামে একটি ইটের ভাটায় এবং পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটা চালানোর অপরাধে অভিযান চালায় প্রশাসন। জরিমানা করা হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তারপরও ঠাকুরগাঁওয়ের ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে অবাধে কাঠ পোড়ানো চলছে স্বাভাবিক হারে। শতাধিক ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করায় একদিকে যেমন উজার হচ্ছে বনজ সম্পদ অপরদিকে দূষিত  হচ্ছে পরিবেশ।

ভাটার ধুলো-বালির কারণে বাড়িতেও ঠিকমতো বসবাস করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের অভিযোগ, ভাটার ধুলোবালির কারণে একটি ধুলিময় পরিবেশে বসবাস করতে গিয়ে শ্বাসকষ্টের মতো রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের।

অনুমোদনহীন ইটভাটা সচল রাখায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১২নং সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মুকুল অভিযোগ করে বলেন, একটি ভাটার অনুমোদন নিতে যেসব কাগজপত্র দরকার তা  অনেক ভাটার নেই। সালন্দর ইউনিয়নের ৪টি ভাটার মধ্যে ২টি ভাটার ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। তাই তিনি অবৈধ ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইটভাটার মালিক মোশারুল ইসলাম জানান, 'জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে এবং কাস্টমসকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ইটভাটা চালানো হচ্ছে। কাজেই অবৈধ বলার সুযোগ নেই।'

তার ভাটায় লাকড়ি পোড়ানোর অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, 'সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত রাখতে ইটের বিকল্প নেই। কাজেই ছোটখাট ২/১টি সমস্যা থাকতেই পারে।'

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা জেলায় প্রায় ১৩০ ইটভাটা চালু থাকার কথা স্বীকার করলেও ভাটায় লাকড়ি পোড়ানো কিংবা লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড.কে এম কামরুজ্জামান সেলিম আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, যেসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। আমরা মোবাইল কোর্টের আওতায় পর্যায়ক্রমে ওইসব ভাটাকে আইনের আওতায় আনছি এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বি আই বি/ এস এ/এডিবি