ন্যাভিগেশন মেনু

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির আসামি কনডম সেলে একা, তবুও করোনা পজেটিভ


সময়টা ছিল বিএনপি সরকারের শাসনামল। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য আনা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির অন্যতম আসামি ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুর রহিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ সোমবার তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার- ২ থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আব্দুর রহিম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ফাঁসির সেলে একাই থাকতেন।

করোনাভাইরাসের কোনো প্রকার উপসর্গ ছিলো না। একা থাকার পরও করোনা পজেটিভ হয়েছেন তিনি।  কারা অভ্যন্তরে যাতে করোনার বিস্তার কঠোরভাবে রোধ করা যায়, সেজন্য আরও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ।  

অস্ত্র আটক কাণ্ডটি বিএনপি-জামাত শাসনামলের ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার ঘাটে।  অর্থাৎ পুলিশের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে বিপদে পড়ে অস্ত্র পাচারকারীরা এবং আটক হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র। চট্টগ্রামের বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির হাবিলদার গোলাম রসুলের টেলিফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সার্জেন্ট আলাউদ্দীন ও কয়লার ডিপো ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সার্জেন্ট হেলাল উদ্দীন ভূঁইয়া। 

দুই সার্জেন্ট দেখেন, কিছু শ্রমিক বড় ট্রলার থেকে কাঠের বাক্সগুলো ক্রেনের সাহায্যে ঘাটে রাখা ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন। এরপর দুই সার্জেন্ট ঘাটে গিয়ে মালিককে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে হাফিজ ও আবুল হোসেন (একজন শীর্ষস্থানীয় আলফা নেতা) জানান, তাঁরাই মালের মালিক। 

কোনো ভণিতা না করেই তাঁরা স্পষ্ট জানান, ‘ট্রলার দুটিতে অস্ত্রশস্ত্র আছে। প্রশাসনের সবাই বিষয়টি জানে। পুলিশের দুই সার্জেন্টের সঙ্গে আবুল হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে হাফিজ বলেন, ‘উনি আলফার নেতা, অস্ত্র তাঁদেরই।এসব অস্ত্রের কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা পুলিশের দুই কর্মকর্তা জানতে চাইলে খেপে যান হাফিজ। 

উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘কিসের কাগজ, এই অস্ত্র আসার খবর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবার জানা আছে, এগুলো নামাতে বাঁধা দিলে আপনার ক্ষতি হবে। খবর পেয়ে হাবিলদার গোলাম রসুলের নেতৃত্বে বন্দর ফাঁড়ির সব সদস্য, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান, ঘাটের আনসারসহ আরও অনেকে ঘাটে এসে জড়ো হন।

সার্জেন্ট আলাউদ্দীনকে বলা হয়- আমরা ১৯৭১ সালে আপনাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক সহায়তা করেছি। এসব অস্ত্রশস্ত্রও আপনাদের মতো আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড সৃষ্টির কাজে লাগবে, আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না। হাফিজ ও তাঁর সঙ্গী বাদানুবাদের একপর্যায়ে পুলিশের দলকে একটি বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। 

কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ টাকা নিতে রাজি হয়নি।  বিষয়টি এমনভাবে জানাজানি হয়ে যায় যে, তখন আর কোনোভাবেই তা চেপে যাওয়ার কিংবা অস্ত্রবোঝাই ট্রাকগুলো ও ট্রলার দুটি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।  

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এবং জামাতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল৷ দু'দিন পর ৩ এপ্রিল কর্ণফুলি থানায় অস্ত্র চোরাচালান এবং আটকের ঘটনায় দুটি মামলা হয়৷ এরপর ২০০৪ সালে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ 

২০০৭ সালে তদারকি সরকারের উদ্যোগে এই মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়৷ প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১১ সালে খালেদা সরকারের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং জামাতের আমীর প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি৷ 

মামলাটিতে মোট আসামি করা হয় ৫২ জনকে৷ চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক এস এম মজিবর রহমান আলোচিত এই মামলার রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং জামাত নেতা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়৷ 

অন্যরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলাফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরল আমিন, ডিজিএফআই-র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই-র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.)সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআই-র মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএল-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক(প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ এবং হাজি আব্দুস সোবাহান৷ 

এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া এবং নুরুল আমিন পলাতক৷  ওই মামলার রায় ঘোষণার সময় পলাতক দু'জন ছাড়া সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷সাক্ষীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে পাঠানো হচ্ছিল৷ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই পারস্পরিক যোগসাজসে এই অস্ত্র পাচারের কাজ করছিলেন৷ যে পুলিশ কর্মকর্তা এই অস্ত্রের চালান আটক করেন তাঁকে তখন চাকরি থেকে বিদায় করা হয়৷

যেসব অস্ত্র ছিল: ৪৬৩টি বাক্স থেকে এমটিটি, এসএমজি, টমিগান উদ্ধার করা হয় ৭৯০টি, গ্রেনেড ২৭ হাজার, রকেট লঞ্চার ১৫০, ম্যাগজিন ৬২০ এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি গুলি পাওয়া যায়৷ 

ভারতে আলফার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল এগুলি৷ পুরো পরিকল্পনা করা হয় ব্যাংককে৷ ঘটনার সময় নাকি পরেশ বড়ুয়াসহ একাধিক আলফা নেতা চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন৷

এস এস