ন্যাভিগেশন মেনু

বাঁশখালীতে নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার, জনমনে স্বস্তি


বাঁশখালীর আলোচিত আহমদ কবির প্রকাশ সোনা মানিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৮ মার্চ) ভোর রাত দুইটার দিকে ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী হাজী আলী মিয়া পাড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় মানিকের বাড়ি থেকে দুটি এলজি পিস্তল, একটি বিদেশী বন্দুক ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও প্রতারণার অভিযোগে ১৭টি মামলা রয়েছে।

নকল স্বর্ণের ব্যবসার সাথে জড়িতরা হচ্ছে মোস্তাক আহমদের ছেলে আবদুর রশীদ (২৫), ছৈয়দ আহমদ প্রকাশ কালাইয়ার ছেলে নুরুল আলম (৪৬), মোস্তাক আহমদ (৫২), আবদু শুক্কুর (২৬), আনিছ (২৩), বাচ্চু(২৮), আহমদ কবির ওরফে সোনা মানিক(৪৫), আবদুল গফুর (৩৮) কালাইয়ার ভাইপুত, আজিম উদ্দিন(৩৩) , কবির আহমদ(৩৬), মোক্তার আহমদ(৩৯), লিয়াকত আলী(৩৫), নুরুল কাদের(৫২) তবে এদের মধ্যে নুরুল কাদের নকল স্বর্ণ ব্যবসার মূল হোতা।

জানা যায়, রাতে ছনুয়া ইউনিয়নের হাজী আলী মিয়া পাড়া এলাকায় সোনা মানিকের বাড়িতে অভিযান চালায় বাঁশখালী থানার এসআই আহসান হাবিবের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। এসময় মানিক বাহিনীর লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। বিগত ২০ বছর ধরে নকল স্বর্ণ ব্যবসার মাধ্যমে ছনুয়ায় এসে প্রতারিত হয়েছেন হাজারো মানুষ। সহায় সম্বল হারিয়ে পথের ভিখারী হয়েছেন অনেক লোক। ছনুয়া ইউনিয়নের দুটি গ্রামে পরিচালিত হয় এই নকল স্বর্ণের ব্যবসা। আহমদ কবির প্রকাশ সোনা মানিকের নেতৃত্বে ছনুয়ায় একটি চক্র সক্রিয়। মানিক এই প্রতারণামূলক ব্যবসা করে রিমোট কন্ট্রোল দরজা সম্বলিত বহুতল বাড়ি বানিয়েছেন। অথচ আজ থেকে ২০ বছর আগে মানিক একজন দিনমজুর ছিলেন। এই চক্রের সদস্যদের পেশা খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য। তারা এলাকায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। প্রতারক চক্রের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। নকল স্বর্ণ ব্যবসার সাথে এই ইউনিয়নের আরো শতাধিক ব্যক্তি জড়িত। এখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও নকল স্বর্ণ ব্যবসার প্রতারণার সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানায়। প্রতারক চক্র যে টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়, তার একটি অংশ এখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের পকেটে চলে যায়।

ছনুয়া ইউনিয়নের দুটি গ্রামে এই নকল স্বর্ণ ব্যবসা পরিচালিত হয়। এর মূল ঘাটি হচ্ছে খুদুকখালী গ্রামের আবদুল্লাহর দোকান। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি আলিমিয়াপাড়া। আবদুল্লাহর দোকান কেন্দ্রিক নকল স্বর্ণ ব্যবসার মূল গডফাদার হচ্ছে নুরুল কাদের। যিনি মূলত এই নকল স্বর্ণ ব্যবসার প্রবর্তক। ছনুয়া ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডে তার স্থায়ী নিবাস হলেও নকল স্বর্ণ ব্যবসার স্বার্থে তিনি ৭নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল্লাহর দোকান এলাকায় বসতবাড়ি করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রতারণার ব্যবসা।
সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদেরকে হাতে রেখে নুরুল কাদের নকল স্বর্ণ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন প্রায় ২০ বছর ধরে।

নকল স্বর্ণের ডেকসি বিক্রির প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার অবস্থান বুঝে তারা একটি পেশা বেছে নেয়। এরপর তারা অবস্থানরত এলাকায় সৎ মানুষ সেজে যান। তারপর এলাকায় ছড়িয়ে দেয় স্বর্ণের ডেকসির কাহিনী। আমাদের এলাকায় এক ধার্মিক মহিলা আছে যিনি স্বপ্নের মাধ্যমে একটি স্বর্ণের ডেকসি পেয়েছেন। কিন্তু এগুলো ঐ মহিলার এলাকার লোকজন জানেনা। জানলে তারা ডেকসিটি হাতিয়ে নেবে, তাই ভদ্র মহিলা উচিৎ মূল্য পেলে গোপনে স্বর্ণের ডেকসিটি বিক্রি করে দেবেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা এমন ভাবে বুঝায় যে, যেকোনো সহজ সরল লোক খুব অল্প সময়ে তাঁদের খপ্পরে পড়ে যায়। প্রতারক চক্রের সদস্যের কথায় কেউ যদি বিশ্বাস স্থাপন করে , তাহলে তাঁকে আরও বেশি বিশ্বাস জমানোর জন্য বিভিন্ন উপদেশ দেয়া হয়, যেমন মাজারে গরু জবাই করে খাওয়ানো, এতিমকে খাওয়ানো, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি। তাঁকে আরও বলা হয়, ভুলেও এ খবর কাউকে প্রকাশ করা যাবেনা। প্রকাশ করলে ধার্মিক মহিলা স্বর্ণ বিক্রি করবে না। এভাবে একসময় প্রতারক চক্রের অন্ধ বিশ্বাসে পড়ে যায় যে কোন ব্যক্তি। এরপর সবার অজান্তে টাকা পয়সা নিয়ে স্বপ্নে পাওয়া স্বর্ণ কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয় ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী মানুষকে। পরে এলাকায় নিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে এলাকাছাড়া করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

অপরদিকে ছনুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি আলিমিয়া পাড়া হচ্ছে নকল স্বর্ণ ব্যবসার দ্বিতীয় ঘাটি। এই এলাকার স্থানীয় ছৈয়দ আহমদ প্রকাশ কালাইয়ার পুরো পরিবার এই ব্যবসার সাথে জড়িত। নকল স্বর্ণ ব্যবসার মূল হোতা কালাইয়ার ছেলে আহমদ কবির প্রকাশ সোনা মানিক সহ কালাইয়ার ৮ পুত্র নকল স্বর্ণ ব্যবসার কারিগর।

স্থানীয়রা জানান, এমনভাবে প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়, ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে আইনী আশ্রয় নেয়ার সুযোগও পান না। বিভিন্ন ফাঁদ পেতে প্রতারক চক্র তাদের মিশন সফল করে। যারা এই নকল স্বর্ণ প্রতারকদের খপ্পরে পড়েন, তারা জীবনে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগই পান না। গত ২ দিন আগে পেকুয়া উপজেলার এক ব্যক্তিকে কৌশলে ছনুয়ায় নিয়ে এসে মারধর করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় এই চক্রের লোকজন।

এই চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হওয়া এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, মানিক বিশ্বাস জমানোর জন্য হাতে নাইলেন, চোখে সুরমা ও মাথায় টুপি পরে চলাফেরা করতো। আর এ সুযোগে আমাকে টার্গেট করে স্বপ্নে পাওয়া স্বর্ণের ডেকসি বিক্রির কথা বলে এলাকায় নিয়ে আমার কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ আশি হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল সেট হাতিয়ে নেয়। এবং ঘরের ভেতরে প্রচন্ড মারধর করে অস্ত্র দিয়ে ছবি তোলে আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করে।

অন্যদিকে সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙ্গিয়া এলাকার আবুল বশর ও মনসুরের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক নুরুল কাদের। বর্তমানে তারা সহায় সম্বল হারিয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করছেন । এভাবে শত শত মানুষকে এই নকল স্বর্ণ ব্যবসার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করে দিয়েছে প্রতারক চক্র।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘সোনা মানিক বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপকর্ম শুরু করে। তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার, উপপরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল হোসেন ও নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মানিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।