ন্যাভিগেশন মেনু

সিনহা নিহত কাণ্ডে ৯ পুলিশকে আসামি করে বোনের মামলা


কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ বুধবার ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। বুধবার টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে মামলাটি করা হয়।

 পরে মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার ওসিকে এজাহারের ধারা অনুযায়ী হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলাটি রেকর্ড করে সাত দিনের মধ্যে আদালতকে অবগত করার আদেশও দেন আদালত।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল ও মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলা রেকর্ডের পর কক্সবাজার র্যাব- ১৫ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আজিম আহমেদকে তদন্ত করার নির্দেশও দেন আদালত।পরে আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য র্যাবের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মাকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিনহা প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। সিনহার মা নাসিমা আক্তারকে ফোন করে সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিহতের পরিবারকে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।অন্যদিকে নিহতের পরিবারের খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সিনহার পরিবার।

সিনহার বড় বোন শরমিন বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সান্ত্বনা দিয়েছেন, আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এ মামলায় টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ পুলিশের মোট নয়জনকে আসামি করা হয়।

সেনাবাহিনীর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) প্রাক্তন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করা হবে।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের কেউ পার পাবে না। কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ তল্লাশিচৌকিতে গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬)। মামলার প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে নিহত সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতকে।

৩১ জুলাই বিকেলে মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতকে নিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্ট থেকে তথ্যচিত্রের ভিডিওচিত্র ধারণের জন্য টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ে যান। এ সময় সিনহার পরনে ছিল কমব্যাট গেঞ্জি, কমব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট। তথ্যচিত্রের ভিডিওচিত্র ধারণ করার উদ্দেশ্যেই এই পোশাক তিনি পড়েছিলেন।

এজাহারের ভাষ্যমতে, রাত আটটা পর্যন্ত পাহাড়ে ছিলেন সিনহা ও সিফাত। তাঁরা পাহাড়ে দিনের ও সন্ধ্যাকালের দৃশ্য ধারণ করেন। রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে নিজস্ব প্রাইভেটকারে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পৌঁছালে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ আসামিরা গাড়িটির গতিরোধ করেন।

এ সময় সিনহা নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। তখন আসামিরা সিফাতকে গাড়ির সামনের বাঁ দিকের দরজা খুলে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যান। এ সময় সিফাত দুই হাত ওপরে তুলে নিজের এবং গাড়িতে বসা সিনহার পরিচয় দেন।

সিনহা গাড়ি থেকে নেমে দুই হাত ওপরে তুলে বারবার নিজের পরিচয় দিতে থাকেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিনহার শরীরে কয়েকটি গুলি করে হত্যা করা হয়।

গুলির আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওয়াই এ/ এস এস