ন্যাভিগেশন মেনু

রোহিঙ্গা সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রতি কোনও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নেই: বিশ্বব্যাংক


রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে এ বিষযে তারা বাংলাদেশকে কোনও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া ব্যাখ্যায় একথা জানিয়ে বলা হয়েছে, মায়ানমার থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু এই মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মায়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোর আশপাশে বসবাসরত ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও বিশ্বব্যাংক সহায়তা করছে।

ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কক্সবাজারের অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, নিরাপত্তা বেষ্টনী, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক রাস্তা, রাস্তার সৌর বিদ্যুৎসহ মৌলিক অবকাঠামো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা সমাধানে বিশ্ব ব্যাংক ৫৯ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

শরণার্থীর রূপরেখা কি কারণে পর্যালোচনার করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া দেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অবস্থা মূল্যায়নের লক্ষ্যে এই পর্যালোচনা করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বর্তমানে শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংকের এমন ১৪টি সদস্য দেশের প্রতিটির পরিস্থিতি ইউএনএইচসিআর তথ্য-উপাত্ত অনুসরণ করে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (২ আগস্ট) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্থানীয় সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশ্বব্যাংক যে সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ তা নাকচ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয় বরং অল্প সময়ের জন্য আশ্রয় প্রার্থী, তাই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সহ ১৬টি দেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে যাতে সংস্থাটি আশ্রয়দাতা দেশগুলোর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতের সাথে তাদের একীভূত করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের সাথে বাংলাদেশের চিন্তাভাবনার কোনও মিল নেই।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে জানান, 'বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআরকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ তারা যেন বাংলাদেশিদের মতো কাজ করতে পারে। চলাফেরায় আইনগত সুবিধা পায়, জমিজমা কিনতে পারে এমনকি নির্বাচনী রাইটও দিতে হবে এদেশের নাগরিকের মতো। দেশের সবক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোন বৈষম্য করা যাবে না। অথচ আশ্রিত রোহিঙ্গারা এসব শর্তের মধ্যে পড়ে না।'

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মায়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালালে রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেন। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে এসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রয়েছে। সরকার মানবিক কারণে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে এ সংখ্যা ৭ লাখ। সরকারের হিসাবে ১১ লাখের বেশি। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর এবং এর আরও আগে সব মিলিয়ে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার বর্তমান সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জন্য মায়ানমার বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তি করে এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।

তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের কোন অগ্রগতি নেই। মায়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহণের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বর্তমানে কার্যত বন্ধই রয়েছে।

এডিবি/