ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রামে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের সরকারিভাবে আইনী সহায়তায় জেলা লিগ্যাল এইড


চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় র‍্যাব-৭ ও পুলিশের কাছে কয়েকধাপে ১৭৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিল। এদের মধ্য ১৪ জন আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের সরকারিভাবে আইনী সহায়তায় এগিয়ে এলো চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড। এসব উপকারভোগী (আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের) অংশগ্রহণে সমন্বয় সভা আয়োজন করা হয়। বাঁশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া এলাকার ১৩৪ জলদস্যুরা বিভিন্ন ধাপে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। 

রবিবার দুপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের  চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি উপকারভোগী (আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের) অংশগ্রহণে স্মার্ট মেডিয়েশন রুমে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের পক্ষে সরকারি খরচে মামলাগুলো পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। 
 
জেলা লিগ্যাল এইড আফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলের সভাপতিত্ত্ব ও জেলা লিগ্যাল এইড সহকারি মোহাম্মদ এরশাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উপকারভোগীদের সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবী এড. মুজিবুর রহমান খান, এড. এ এফ এম সালাহ উদ্দিন, এড. জাফর ইকবাল, এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মীর মোঃ একরাম হোসেনের। এসময় লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী, সাংবাদিক, লিগ্যাল এইড অফিসের উপকারভোগীবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

জলদস্যুরা জানায়, সরকারি প্রতিশ্রুতি ও সাংবাদিকদের আস্থায় আসরা র‍্যাব-পুলিশের  আত্মসমর্পণ করেছি। এতে এশিয়ান টিভি সাংবাদিক একরাম কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমাদের বাড়ি থেকে বা বিভিন্ন জায়গাতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। সেজন্য আমাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কাছে আইনী সহযোগিতা চাচ্ছি।
  
আত্মসর্মপণকারী জলদস্যু প্রধান ও ইউপি মেম্বার বাইশ্যা বলেন, আমি আত্মসর্মপণের পরে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। জনগণও আমাকে ভোট দিয়ে এলাকার মেম্বার বানিয়েছে। আমি পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে চলতেছি। সরকার আমাদের মামলা থেকে তুলে নিলে, এতে অন্যারা এই পথ থেকে ফিরে আসবে। 

আইনজীবীরা জানায়, মামলাগুলো পূর্ণাঙ্গ রের্কড লাগবে। কারণ এসব ধর্ষণ, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মামলা পরিচালনার জন্য উপকারভোগি জলদস্যুদের সবসময় হাজিরা হবে। সরকার একটা ভালো উদ্যাোগ নেয়ার জলদস্যুরা আলো মুখ দেখবে। আগামীতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে অন্যসব জলদস্যুরা বিরত থাকবে। জেলা লিগ্যাল এইড মাধ্যমে তাদের সবরকমের সহযোগিতা দেয়া হবে।

সভাপতির বক্তব্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমরা আইনী সেবা ছাড়া অন্যান্য সেবাও দিতে থাকি। অসহায় জনগণকে ভূমি, দাম্পত্য জটিলতাসহ সব ধরনের আইনী সহায়তা জনগণকে দেয়া হচ্ছে। 
তিনি বলেন, অসহায় মানুষের মামলার ব্যয়, বাংলাদেশ সরকার দেয়। আর্থিক ভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিদ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তীতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে আইগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ প্রণয়ন করেন।  উক্ত আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
 
আপনারা জানেন, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের প্রসারকল্পে সরকার তথা জাতীয় সংস্থা আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। সরকারের মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অসহায়, দরিদ্র, নির্যাতিত বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নানাবিদ কারণে বিচারপ্রার্থীতে অসমর্থ অসহায় বিচারপ্রার্থীর আইনি সহায়তা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি খরচে আইনি সহায়তা অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণের নাগরিক অধিকার। 

আপনারা অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমরা তথা সরকার কাজ করছে
তিনি আরও বলেন, আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের জেলা লিগ্যাল এইড থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। আমরা অসহায় মানুষকে আইনী সেবা দিচ্ছি। তাই এসব সেবা যাতে উপকারভোগিরা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন ফিরে আসেন। নিয়মিতভাবে হাজিরা দেয়া, আইনজীবী সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে সহজে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, বিগত ২০২৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মীর মোঃ একরাম হোসেনের মধ্যস্ততায় র‍্যাব ও পুলিশের সহায়তায় যথাক্রমে ৪৩জন, ৯৬ জন ও ৩৪ জন আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের সরকারের আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি মাধ্যমে ১৪ জনকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস চট্টগ্রামের মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।