ন্যাভিগেশন মেনু

সবার উপরে বাংলাদেশ


এবছর এশিয়ায় প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্প মজুরির টেক্সটাইল খাত, তৈরি পোশাক খাত ও জুতাশিল্পে বাড়তে থাকা বিদেশি বিনিয়োগের কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের হার ৮ শতাংশ হবে। ২০১১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রত্যেক বছর কমপক্ষে ৬ শতাংশ ছিল।

এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মারকিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস বলছেন, বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মাসিক গড় মজুরি সাড়ে ৮ হাজার টাকা (১০১ মার্কিন ডলার)। এ স্বল্প মজুরির কারণে দেশটিতে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং উন্নত জীবন মানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ফোর্বস বলছে, ব্যবসা সহজ হওয়ায় বাংলাদেশে ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সাড়ে ১৯ শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ৭ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বৈশ্বিক আমদানি-রপ্তানি মন্দায় বিশ্ব অর্থনীতি যখন ধুঁকছে, ঠিক তখনই উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনীতিতে আশার আলো দেখছে । ২০২০ সালে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ৫০ শতাংশ এশিয়া থেকে আসবে বলেও জানিয়েছে এই সাময়িকী। যদিও চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর কথা বলছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

ম্যানিলাভিত্তিক ৪৫ দেশের এ ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০২০ সালে এশিয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও তাজিকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। প্রবৃদ্ধির হারে চলতি বছর এশিয়ায় সবার ওপর থাকতে পারে বাংলাদেশ।

ফোর্বস বলছে, বাংলাদেশের পরে এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে পারে ভারতের। দেশটির সরকার এ অঞ্চলে ইলেক্ট্রনিকস পণ্য-সামগ্রীসহ উৎপাদন খাতের পাওয়ার হাউস হতে চায়। যে কারণে চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ থাকলেও চলতি বছর তা কমে যাবে। দুই বছর ধরে প্রবৃদ্ধির নিম্নহার নিয়ে দেশটির অর্থনীতি ধুঁকছে। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই নিম্নগতির কারণ দেশটির আটটি শিল্পখাতে ধস; এসবের অধিকাংশই ঋণ সঙ্কটে ভুগছে। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে একাধিক প্রণোদনা ও কর হ্রাস করেছে। তারপরও ২০২০ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হতে পারে।

চলতি বছর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত তাজিকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে। সোনা ও রুপার খনি, ধাতু প্রক্রিয়াকরণ, ১০ লাখ প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ২০১৬ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৯, পরের বছর ৭ দশমিক ১। ২০১৮ সালে এ প্রবৃদ্ধি বেড়ে পৌঁছায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশে।

এশিয়ার আরেক দেশ মিয়ানমারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। মাত্র ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের নিম্ন ভিত্তি নিয়ে দেশটির অর্থনীতির যাত্রা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস বলেছেন, গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের উৎপাদনশীল রফতানি খাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে দ্রুতগতিতে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত তিন বছরে সাড়ে ৬ শতাংশের ওপর ছিল। সামরিক শাসনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্রের পথে সদ্য যাত্রা শুরু করা মিয়ানমার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার আনছে।

এশিয়ার আরেক দেশ কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চীনে কম্বোডিয়ার বিনিয়োগ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় এক কোটি ৬৫ লাখ মানুষের এই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশ, মিয়ানমারের মতো সস্তা শ্রম সহজলভ্য হওয়ায় কম্বোডিয়ার তৈরি পোশাক শিল্পে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন।

দেশটির রিয়েল এস্টেট খাত, উপকূলীয় রিসোর্ট, দুটি বিমানবন্দরসহ সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতে চীনা বিনিয়োগকারীরা অর্থ ঢালছেন। ২০১৮ সালে কম্বোডিয়ার শুধু অবকাঠামো খাতেই প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন।

ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছর হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১২ সালের পর থেকে দেশটির এ প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশের নিচে নামেনি। ফোর্বস ম্যাগাজিন বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশের মতোই বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখনও বিদেশি বিনিয়োগ।

কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ভিয়েতনামে ২০১৮ সালের প্রথম পাঁচ মাসে আগের বছরের তুলনায় ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া এশিয়ার অন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর থাকবে বলে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর নেপালের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি, মালদ্বীপের ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি, লাওস এবং ফিলিপাইনের ৬ দশমিক ২ ও মঙ্গোলিয়ার ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে।

সূত্র : ফোর্বস

ওআ