ন্যাভিগেশন মেনু

অল্পের জন্য জবাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল নীলগাইটি


ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলা দোগাছি গ্রামে ফসলের খেতে ছোটাছুটি করছিল অপরিচিত নীলগাইটি । গ্রামের কয়েকজনের নজরে এলে তাঁরা প্রাণীটিকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন।

খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক গ্রামবাসী সেখানে ভিড় জমান। একসময় গ্রামবাসী প্রাণীটিকে জবাই করে মাংস খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা প্রাণীটির গলায় ছুরিও চালাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে সে সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সেখানে গিয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলা দোগাছি এলাকায় এ কাণ্ড।শৌলা দোগাছি এলাকার যুবক কৃষ্ণরাম বলেন, অপরিচিত প্রাণীকে দেখতে পেয়ে তাঁরা গ্রামের অন্যদের খবর দেন। একপর্যায়ে ধাওয়া করে প্রাণীটিকে ধরতে সক্ষম হন গ্রামবাসী। পরে প্রাণীটি উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত ক্যাম্পে নিয়ে যান বিজিবির সদস্যরা।

বিজিবির কান্তিভিটার সীমান্ত ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আফলাতুন নিজামী বলেন, ‘অপরিচিত প্রাণী আটকের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, গ্রামবাসী প্রাণীটিকে জবাই করার চেষ্টা করছে।

তাদের কাছ থেকে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে আমরা ক্যাম্পে নিয়ে আসি। পরে উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জনকে খবর দিলে তাঁরা প্রাণীটির চিকিৎসা করেন।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন (ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) জাহাঙ্গীর আলম আজ বুধবার  বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে বনগরু হিসেবে পরিচিত হরিণ আর গরুর মাঝামাঝি দেখতে উদ্ধার হওয়া প্রাণীটি আসলে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই।

এটি একটি পুরুষ নীলগাই। এটি কিছুটা ছাই রঙের। চিকিৎসা দেওয়ার সময় নীলগাইটির গলায় ছুরি দিয়ে কাটাসহ দেহের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। বিজিবি উদ্ধারের সময় এটির গলা থেকে রক্ত ঝরছিলো।   পরে ক্ষতস্থানে সেলাই করে দেওয়া হয়। নীলগাইটি এখন শঙ্কামুক্ত।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাইটি কখনোই গরুশ্রেণির নয়। বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ প্রাণী।

যার বৈজ্ঞানিক নাম।  শত বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মাঠে-ঘাটে একসময় নীলগাইয়ের দেখা মিলত। এখন দেখা যায় না।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের যদুয়ার গ্রামে একটি নীলগাই ধরা পড়েছিল। পরে সেটা দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।

নীলগাই এলো কোথা থেকে?

বন্যপ্রাণী ও জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান খান বলছেন নীলগাই বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এটি খুব বিরল প্রজাতির বিলুপ্ত একটি বন্যপ্রাণী। বাংলাদেশের বনে এই প্রাণী দেখা যায়না। তবে ভারতের বনে থাকতে পারে। ১৯৪০ সালের পরে নীলগাইয়ের অবস্থান বাংলাদেশে আর আমাদের রেকর্ডেড নেই," বলছিলেন মিস্টার খান।

তাহলে এই নীলগাইটি এলো কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন হয়তো সীমান্ত অতিক্রম করে এটি বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে।

বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার মোহাম্মদ আফলাতুন নিজামিও বলছেন যে স্থানীয়রা মনে করছেন এটি বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বা হয়তো খাদ্যের জন্য এসেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন আরে এর আগেও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার এলাকায় একটি পুরুষ নীলগাই ধরা পড়েছিলো।

সেটিকে তখন চিকিৎসা শেষে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিলো।

এর আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এলাকায় নদীর কাছ থেকে আরেকটি নীলগাই আটক করেছিলো গ্রামবাসী। সেটিকেও পরে রামসাগরে এনে রাখা হয়েছিলো।

এই এক জোড়া নীলগাইকে পরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারে রাখা হয়।

ওই সেন্টারের পরিচালক মোঃ জাহিদুল কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন এই এক জোড়া থেকে নতুন নীলগাইয়ের বংশ বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

আমরা আশা করছি দ্রুতই সুখবরটি পাবো। তারা (নীলগাই জোড়া) আমাদের তত্ত্বাবধানে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, “ বলছিলেন কবির।

বন্যপ্রাণী ও জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান খান এটি আসলে গরু শ্রেণীর একটি প্রাণী তবে গরু নয়।

তবে অনেক গবেষক এটিকে বড় হরিণ শ্রেণীর প্রাণী হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। জীববিজ্ঞানে এটিকে 'অ্যান্টিলোপ' ধরণের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চেহারায় ঘোড়ার সাথে কিছুটা সাদৃশ্য থাকা এ প্রাণীটির অস্তিত্ব ভারতের অনেক এলাকায় থাকলেও বাংলাদেশে তা বিলুপ্ত। এছাড়া পাকিস্তান ও নেপালেও এর দেখা মেলে।

কর্মকর্তারা বলছেন ,সাধারণত ঝোপ জঙ্গলে দলবেঁধেই ঘুরতে ভালোবাসে নীলগাই, যার সামনের পা পেছনের পা থেকে একটু লম্বা হয়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন এক সময় উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকায় নীলগাইয়ের বিচরণের ইতিহাস পাওয়া গেলেও ১৯৪০ এর পর থেকে বাংলাদেশের ভূ এলাকায় প্রাণীটি খুব একটা দেখা যায়নি।

এস এস