ন্যাভিগেশন মেনু

আজ যা দেখা গেল মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমগুলোতে


বিতর্কিত সমাজকর্মী মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের পর মিল্টনের প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের দুটি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক নীরবতা বিরাজ করছে। এক দশক ধরে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটিতে শুক্রবার একদম নীরব পাওয়া গেছে।

বুধবার বিভিন্ন জালিয়াতির অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

শুক্রবার সাভারের কমলাপুর বাহিরটেকস্থ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের স্থায়ী কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে পুরো চত্বর ছিল নির্জন ও নীরব। প্রধান ফটক বন্ধ ছিল, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারেনি।

৭-তলা ভবনের ভেতরে লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে। এই সংবাদদাতা আশ্রমের অফিসের কর্মীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি। মূল ভবনের সামনে একটি রান্নাঘর ছিল। রান্নাঘরের ভেতরে একজন নারীকে পাওয়া গেলেও তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

আশ্রমের আশেপাশে ঘুরে দেখার সময় এই প্রতিবেদক পাশের একটি বাড়িতে যান, সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, “আমরা ফেসবুকে মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন কার্যকলাপ দেখতাম। মিল্টন দা যখন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেন, তখন আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। আমরাও আশ্রমে দান করি। কিন্তু যখন আমরা তার সাথে বাস্তবে যোগাযোগ শুরু করি, তখন আমরা তাকে ফেসবুকে যেমন দেখতাম তার ঠিক বিপরীত চরিত্রে পাই।”

তিনি বলেন, “তার ব্যবহারে অহংকারের ছাপ পাওয়া যায়। এবং তার আচরণ ছিল অভদ্র। নির্মাণকাজ চলাকালে তিনি অপর এক ব্যক্তির জমির ভেতরে একটি কক্ষ নির্মাণের চেষ্টা করেন। সস্তায় জমি বিক্রি না করায় তিনি একটি পরিবারকেও মারধর করেন।”

“তিনি তার আশ্রমের সামনের রাস্তাটি এতটাই সরু করে রেখেছেন যে তার আশ্রমের পরে থাকা অন্য জমির মালিকরা তাদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারতেন না। অন্য জমির মালিকরা তাকে রাস্তা প্রশস্ত করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি তাদের অনুরোধ রাখেননি,” বলেন ওই নারী।

তিনি আরো বলেন, আশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় ৩-৪ বছর আগে। কিন্তু আশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছরের মার্চে। আমরা আশ্রমের পাশেই থাকি, কিন্তু যখন উদ্বোধন করা হয়েছিল তখন তিনি আমাদের একবারের জন্য ও বলেননি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত মিল্টন সমাদ্দার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। যে অপরাধের কথা বলা হচ্ছে তা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। তিনি এখানে আশ্রম চালাতেন বলে জানতাম। কিন্তু এখানে সবাই জানে তার খারাপ আচরণের কথা।”

“প্রায়ই, আশ্রমে আসা দর্শনার্থীরা বা লোকেরা খারাপ আচরণের অভিযোগ করতেন। এমনকি আত্মীয়রা নিজেদের পরিচয় দিলেও প্রায়ই দেখা করতে দেওয়া হতো না। আমরা স্থানীয় হিসেবে এসব জানতাম। আমরা মিডিয়ায় খবরের পরে জানতে পারি তার ব্যাপারে,” বলেন তিনি।

একই অবস্থা মিরপুর দারুসসালাম থানার কল্যাণপুরে অবস্থিত চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারেরও। পুরো প্রতিষ্ঠান নীরব ছিল, এবং প্রধান প্রবেশদ্বার বন্ধ ছিল। বাইরের কেউ ঢুকতে পারেনি।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার কল্যাণপুর কেন্দ্রের নিরাপত্তারক্ষী রাসেল বলেন, “ডিবি পুলিশ সবাইকে ঢুকতে নিষেধ করেছে। হয় ডিবির অনুমতি নিয়ে নয়তো প্রশাসন নিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হবে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ম চলবে।”

ভিতরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানিয়ে তিনি বলেন “ভিতরে কোন সমস্যা নেই; সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। সংস্থার লোকেরা সবকিছু দেখভাল করছে।”

এর আগে বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এরপর মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। বৃহস্পতিবার একটি মামলায় রিমান্ড প্রার্থনা করে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। যদিও মিল্টন সামদ্দার কয়েকটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।