ন্যাভিগেশন মেনু

আদমজী ইপিজেডে বাড়ছে বিনিয়োগ


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত আদমজী ইপিজেড। রাজধানী ঢাকা থেকে এর দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের এটি ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা।

উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করাসহ সরকার ও কর্তৃপক্ষের সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলো আদমজী ইপিজেডে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেছে। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আদমজী ইপিজেড বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে।

২০০৬ সালে পাটকলের স্থানে আদমজী ইপিজেড তৈরি হওয়ার পর থেকে সরকার লোকসানের মুখ দেখা তো দূরের কথা, সেখান থেকে প্রতিবছর আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে মাধ্যমে শুরু করা বিনিয়োগ বেড়ে ১৪ বছর পর অর্থাৎ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৫৫৮.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিনিয়োগ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে রপ্তানিও। এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫৪৫২.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।

আদমজী ইপিজেড ২২৯টি শিল্প প্লট নিয়ে ২৪৫.১২ একর জমির ওপর স্থাপিত। অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত এই ইপিজেডে ৫১টি শিল্প কারখানা চালু রয়েছে এবং এছাড়াও আরও ১৬টি কারখানা প্রক্রিয়াধীন। চালু প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫৫৮.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট রপ্তানি হয়েছে ৫৪৫২.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চালু শিল্প কারখানাগুলোতে মোট কর্মসংস্থান হয়েছে ৫১ হাজার ৬০৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকের। যাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ নারী।

ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে কর্মসংস্থান হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৬২৫ জনের।

আদমজী ইপিজেডে বর্তমানে উৎপাদনরত ৫১টি কারখানার মধ্যে ২৬টি সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন বা ‘এ’ টাইপ প্রতিষ্ঠান, ১২টি যৌথ মালিকানাধীন বা ‘বি’ টাইপ এবং ১৩টি সম্পূর্ণ দেশিয় মালিকানাধীন বা ‘সি’ টাইপ প্রতিষ্ঠান (অক্টোবর, ২০২০ পর্যন্ত)।

আদমজী ইপিজেডে গার্মেন্টস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, গাড়ির সিট ট্রিম কভার, লেবেল, সোয়েটার, মেটাল পণ্য, জুয়েলারি, ওপিসি ড্রাম, কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্টিলাইজার, নিটিং অ্যান্ড টেক্সটাইল পণ্য ইত্যাদি উৎপাদিত হয়।

এই ইপিজেডে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান, মরিসাস, সিঙ্গাপুর, চিন, কানাডা, স্পেন, জার্মানি, হংকং (চিন), মালয়শিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, ইউক্রেন এবং রোমানিয়ার বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেছেন। যা শতভাগ রপ্তানিযোগ্য পণ্য।

যেসব কারখানার আগামি তিন মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিলো, করোনার কারনে তাদের উৎপাদন পিছিয়ে গেছে। তবে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশি একটি তৈরি পোষাক কোম্পানি মেসার্স সোয়াদ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের অপারেশন শুরু করে। তাদের বিনিয়োগ ১৪.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর, ২০২০) আদমজী ইপিজেডে কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে ৩টি কোম্পানি বেপজার সাথে বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে একটি জার্মান প্রতিষ্ঠান ব্রাইডাল পোশাকসামগ্রী, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল এবং সম্পূর্ণ বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান পিপিই ও খেলনা প্রস্তুত করবে। মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগ হবে ৪৫.৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেখানে ২ হাজার ৮৪ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

আদমজী পাটকলকে ঘিরে শীতলক্ষ্যার দুইপাড়ে সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও সোনারগাঁয়ে গড়ে ওঠা সেই বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাস, যা আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বৃদ্ধি পেতে থাকে কয়েকগুণ।

বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, দারিদ্র্যতা দূরীকরণ এবং শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি প্রক্রিয়াকাল এলাকা স্থাপনের নীতিমালা গ্রহণ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী জুট মিলের জায়গায় আদমজী ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এ ছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্রিয় অংশীদার হিসাবে বেপজা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই আওতায় আদমজী ইপিজেডের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় এসেছে। বেপজা নির্বাহী দপ্তরের সাথে আদমজী ইপিজেডের দ্রুত যোগাযোগের লক্ষ্যে ভিডিও কনফারেন্স চালু হয়েছে। জোনের অধিকতর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে জোনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইপিজেডে সিসিটিভি সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

আদমজী ইপিজেডে শ্রমবান্ধব পরিবেশ বিরাজমান। নিরবিচ্ছিন্ন শান্তিময় পরিবেশে উৎপাদন প্রক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এমএইচএস/সিবি/এডিবি