ন্যাভিগেশন মেনু

গণধর্ষণ মামলার আসামির সাথে পুলিশের সখ্যতা!


পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, নির্যাতন, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, উদ্ধার করা মালপত্র আত্মসাৎ ইত্যাদি অভিযোগ নতুন নয়।

এসব অপরাধের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে চিহ্নিত অপরাধী ও মামলার আসামিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, আসামিদের রক্ষার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হচ্ছে। ধর্ষণ ও মাদক মামলার মতো চিহ্নিত আসামিদেরও মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য নানা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এমনকি আসামিদের সঙ্গে সখ্য থাকায় অনেক সময় মামলা নিতে গড়িমসি করারও অভিযোগ বিভিন্ন সময় পাওয়া যায়।

সম্প্রতি গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ মামলার আসামির মো. জামাল উদ্দিন সরকার ওরফে সরকার জামালের সাথে সখ্যতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জামাল উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী এবং সবুজবাগ থানায় গনধর্ষণের মামলা রয়েছে। মামলার কপি বাংলাদেশ পোষ্টের কাছে আছে।

জামাল উদ্দিন সরকার গনধর্ষণের মামলার আসামী হয়েও বিভিন্ন সময় পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের অফিসে যাতায়াত করেন। সূত্র জানায় পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম যখন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ছিলেন তখন তার সাথে জামাল উদ্দিন সরকারের সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের বদলি গুলশান থানায় হয়।

গুলশান থানায় বদলি হওয়ার পরে জামাল উদ্দিন সরকারের সাথে তার সখ্যতা চলমান থাকে। মাজহারুল ইসলামকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে জামাল উদ্দিন সরকার ফুলের তোরা নিয়ে গুলশান থানায় যান। মাজহারুল ইসলাম সেই ফুল গ্রহন করেন এবং জামাল উদ্দিন সরকারকে হাস্যজল ভাবে জন্মদিনে কেক উপহার দেন।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের সাথে গণধর্ষণ মামলার আসামির মো. জামাল উদ্দিন সরকার ওরফে সরকার জামালের হাস্যোজ্জ্বল ছবি

জামাল উদ্দিন সরকার সেই ছবি ফেইসবুকেও পোষ্ট করেন। তাতে জামাল উদ্দিন সরকার লিখেন “নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কাজল আমার প্রিয় ভাই আজ আমার জন্মদিনে কেক উপহার। ভালোবাসা অবিরাম।”

বাংলাদেশ পোষ্টের কাছে সেই ছবি সংরক্ষিত আছে।

জামাল উদ্দিন সরকার নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। নিজেকে ‘প্রতিদিনের খবর ডট নেট’ নামে একটি ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে দাবি করেন।

জামাল উদ্দিন সরকারের সাথে যোগাযোগ করে তার ২ টি মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি দাবী করেন তার বিরুদ্ধে সব গুলো মামলাই ভুয়া।

জামাল উদ্দিন সরকার বলেন “তার বিরুদ্ধে মোট ৪ টি গনধর্ষণের মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ২ টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে এবং এতে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবী করেন”।

এই প্রতিবেদক তার ২ টি মামলার ফাইনাল রিপোর্টের কপি চাইলে “আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন”।

সরকারী নিময় অনুযায়ী অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করতে আগেই নিবন্ধন নিতে হয়।

জামাল উদ্দিন সরকারের কাছে তার অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন আছে নাকি জানতে চাইলে বলেন “আমার অনলাইন পোর্টালের নিবন্ধন নেই”।

নিবন্ধন ছাড়াই জামাল উদ্দিন সরকার তার ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিচলনা করে আসছেন।

অভিযোগ আছে তার ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয়ে তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে আসে। কে কখন ছবি তোলে এইটা আমি মনেও রাখি না”।

মাজহারুল ইসলাম বলেন “জামাল উদ্দিন সরকার আমার বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেও নিউজ করিয়েছে। আমি দেড় বছর আগে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে চলে আসি কিন্তু এখনও আমার নামে ডিএমপি কমিশনার এবং আইজিপি বরাবর অভিযোগ দেয়”।

 অপরাধ ও আইন বিশেষজ্ঞরা এ প্রসঙ্গে বলেন, চিহ্নিত আসামি বা অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য গড়ার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা গর্হিত অপরাধ। এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলেই সঠিক তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে। কোনোভাবেই এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না।

মাজহারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। তিনি সরকারী নাজিম উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিয়েছেন। র্বতমানে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।