ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের যোগদান


বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অনুমোদনক্রমে  বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৭৩ এর ১২(২) ধারা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবু তাহেরকে চবির ভাইস-চ্যান্সেলর পদে সাময়িকভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বুধবার সকালে চবি উপাচার্য পদে যোগদান করেন। 

এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর এমিরেটাস ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, চবি বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও চবি উপ-উপাচার্যদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। যোগদানশেষে তিনি চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। 

পরে চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এক মতবিনিময় ও সংবর্ধনা সভা। সংবর্ধনা সভাশেষে সকলকে সাথে নিয়ে চবি স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যূরাল, শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি সৌধ ও চবি স্মরণ চত্বরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।  

মতবিনিময় সভায় অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন চবি নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের, চবি সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর এমিরেটাস ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, চবি উপ উপাচার্যদ্বয়, চবি সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, চবি সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, চবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ, চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর মোঃ হেলাল উদ্দিন নিজামী, চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, চবি মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম, চবি জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ তৌহিদ হোসেন, চবি ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ মোস্তফা, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক, চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি প্রফেসর আবু মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, চবি অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ, চবি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ আলী হোছাইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ।

চবি উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান সৃজন ও জ্ঞান বিতরণের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সকলকে সর্বোচ্চ সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে।” 

তিনি আরও বলেন, “৪৬ বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্র হিসেবে এসেছি; আজ উপাচার্যের দ্বায়িত্ব নিয়েছি। রাষ্ট্র আমাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এলামনাই হিসেবে আমি তা যথাযথভাবে পালন করে যাব।” 

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়তে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে স্ব স্ব দ্বায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের আহবান জানান। উল্লেখ্য,প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের ১৯৬২ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাবুনগর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১১ ভাই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। লেখাপড়ার হাতেখড়ি বাবুনগর প্রাইমারী স্কুলে, অত:পর কাঞ্চনা হাইস্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, ইনহা বিশ^বিদ্যালয় (দক্ষিণ কোরিয়া) ও টেক্সাস এএন্ডএম বিশ^বিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট) অনার্স (১৯৮২) ও মাস্টার্স (১৯৮৩) উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ডেপুটেশনে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতেই বিসিএস’  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং পরবর্তীতে তা ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সহকারী অধ্যাপক, ২০০০ সহযোগী অধ্যাপক ও ২০০৪ অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ আইন অনুসারে চবি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত হয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। 
 
তিনি ডেপুটেশনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এবং লিয়েনে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। উপরন্ত তিনি জীবন বীমা কর্পোারেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উক্ত কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  তাঁর রচিত ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ক ১৭টি বই অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত। দেশে বিদেশে তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ১০৭ এর অধিক। এমফিল/পিএইচডি গবেষণা সম্পন্নকারী ২৫ জন গবেষকের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক/কনভেনর/থিসিস এক্সামিনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যা আজও অব্যাহত আছে। বর্তমানে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের এর সাইটেশনের সংখ্যা তিনশতের অধিক। 

“মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা” ও “শিল্প সম্পর্ক” বিষয়ক শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশে তাঁর খ্যাতি আছে। ভিজিটিং প্রফেসর/এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি/রিসার্চ ফেলো/অতিথি বক্তা হিসেবে তিনি দেশে বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কাজ করেছেন। রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও স্বাধীনতা, মুক্তিবুদ্ধির চর্চা, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে তাঁর রয়েছে অবিচল অবস্থান। পারিবারিকভাবে তিঁনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেও শিক্ষক পরিচয়ে তিনি নিজেকে গর্ববোধ করেন। তিনি একাডেমিক ও গবেষণার কাজে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, জাপান, উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব ও সার্কভুক্ত দেশসমূহ ভ্রমণ করেন এবং ৩০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর পিতা মরহুম বুজুরুজ মেহের (গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক কমর্কর্তা) ও মাতা মরহুমা জাহানারা বেগম ছিলেন সমাজ হিতৈষী। স্ত্রী ফারহানা আলম একজন গৃহিনী এবং তিনি এক কন্যা ও দু’পুত্র সন্তানের জনক।