ন্যাভিগেশন মেনু

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপরাধ চক্রের ফাঁদে বিত্তবানরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও বিত্তবান ব্যক্তিদের বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি নারী অপরাধ চক্র। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসব উঁচু শ্রেণীর মানুষকে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিলেও মানসম্মানের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রলোভন ও কৌশলে বাড়িতে ডেকে এনে নিজেদের তৈরি ফাঁদে ফেলে অর্থ দাবি করে নারী চক্রটি। দাবিকৃত অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, জোরপূর্বক আপত্তিকর ছবি তুলে তা ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। এতে মানসম্মানের ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয় সমাজের বিত্তবানরা।

জেলার একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন (ছদ্মনাম)। ব্যবসায়ীক পরিচয়ে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্যক্তি ইসমাইলকে বিয়ের জন্য বউ খুঁজতে বলে। দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সূত্রে তিনি শরণাপন্ন হয়েছিলেন জেলা শহরের পিটিআই মাস্টারপাড়া মহল্লার মোসা. আলেয়া খাতুনের (৫২) কাছে। আলেয়া প্রতিশ্রুতি দেন তার কাছে এমন একটি মেয়ের সন্ধান আছে। এরপর গত ১৫-২০ দিন বারবার মেয়ে দেখার জন্য ফোন দিতে থাকে আলেয়া। ব্যবসায়ীক  কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়ে দেখা হয় না ঠিকাদার ইসমাইল হোসেনের।

গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নিজের কাজের সূত্রে পিটিআই এলাকায় অবস্থানকালেই আলেয়া ফোন দেয় ইসমাইলকে। বাড়িতে ডাকে বউ দেখার কথা বলে। বেলা সাড়ে ১১টায় আলেয়ার বাড়িতে গিয়ে মেয়ে দেখার মাঝেই টয়লেটে গেলে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয় আলেয়া। পরে কয়েকজন লোক ডেকে অনৈতিক কাজের অভিযোগ করে আলেয়া।

ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, মেয়েটি কোন অভিযোগ করেনি, তারপরও আলেয়া সাজানো ফাঁদে তার নিজের কয়েকজন ছেলে দিয়ে আমাকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখায়। জোরপূর্বক আমাকে শার্ট-প্যান্ট খুলিয়ে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় খালি গায়ে বিছানায় বসিয়ে ছবি তুলে। পরে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা।  মানসম্মানের কথা ভেবে দেড় লাখ টাকা দিতে চাই। বাড়িতে এসে তাদের দুইজন ছেলের হাতে ৮০ হাজার টাকা তুলে দেই। পরে এনিয়ে সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন ইসমাইল হোসেন (ছদ্মনাম)। বর্তমানে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে থানায় অভিযোগের পর থেকেই পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত আলেয়া খাতুন, তার বড় ছেলে নাইম ও ছোট ছেলে হাসান।

বছর খানেক আগে নাচোল উপজেলার নেজামপুর গ্রামের ৩০ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীকে আলেয়ার ছোট ছেলে হাসান বাসায় দাওয়াত দেয়ার নাম করে ডেকে আনে। বাসায় আসলে একই ঘটনা ঘটে সেই ব্যবসায়ীর সাথে।

জানা যায়, একইভাবে ব্ল্যালমেইল করে অর্থ আদায় করা হয়। গত ৪ বছর আগেও একই ঘটনা ঘটে সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের এক ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তার সাথে। ৫০ বছর বয়সী সেই কর্মকর্তার কাছে নেয়া হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলেয়ার কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সে (আলেয়া) একেক সময় একেক জায়গায় বাসা ভাড়া নেয়। এরা বসবাস করতো জেলা শহরের ম্যাথরপাড়ায়। বেশ কয়েক বছর থেকে পিটিআই মাস্টারপাড়ায় বসবাস করছে। এটিই তাদের পেশা। এভাবেই তারা বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে। তার দুই ছেলে মাদকসেবি ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত বলেও জানা যায়।

গত মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টা ও রাত ৮টায় আলেয়ার বাসায় গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।

সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, এখনো কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

জে এইচ/এস এ/ওআ