ন্যাভিগেশন মেনু

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে স্বাস্থ্য কর নীতি প্রণয়নের দাবি বিশেষজ্ঞদের


জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় স্বাস্থ্য কর নীতি প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশ্লেষকরা।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ও চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ও চাপ কমাতে হলে রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে। স্বাস্থ্য কর নীতি আরোপের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ও ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে চিনিযুক্ত খাবার, পানীয়, বেভারেজ ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ হারে করারোপ করা জরুরি। একইসঙ্গে একটি স্বাস্থ্য কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞরা।

আজ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে ‘‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন এবং স্বাস্থ্য কর নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বকারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস শফিকুল ইসলাম ও পরামর্শক ফাহিমুল ইসলাম।

এই সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে চিনি জাতীয় খাবার ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে অসংক্রামক রোগের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৪৮ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী ও ৯৫.৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চিনিযুক্ত সফট ড্রিংকস গ্রহণ করে। প্রতিদিন কেউ এসব পানীয় বা চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে বছরে তার ওজন ৫ পাউন্ড বেড়ে যায়। পাশাপাশি তাদের টাইপ টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে চিনিযুক্ত খাবার মানব স্বাস্থ্যের মারাত্বক ঝুঁকি করছে।

তারা আরও বলেন, তামাকজনিত রোগে প্রতিদিনই মানুষ মরছে। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী তামাকজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় ছিলো প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমানে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করতে হলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকজনিত ব্যয়ও কমে আসবে।

তারা আরও বলেন, চিনিযুক্ত খাবার, পানীয় ও জামাকজাত দ্রব্য ছাড়াও পরিবেশের ওপর ক্ষতি করে এমন যেকোনো কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। একইসঙ্গে সেই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ব্যয় করতে হবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমে আসবে।

এসময় তারা তামাকের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য অধিক পরিমানে বৃদ্ধি; তামাকে কর ফাঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে জরুরিভিত্তিতে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব লোকাল গভার্নমেন্ট, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশাল মেডিসিনের প্রতিনিধিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।