ন্যাভিগেশন মেনু

চোরাই পথে আসা মোবাইল কেউ ব্যবহার করতে পারবে না:পলক


ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, অনিবন্ধিত, অবৈধ বা চোরাই পথে আসা কোনো মোবাইল ফোন কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অল্প সময়ের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আইএমইআই) আরও কার্যকর করা হবে।  

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।

নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল ফোন ছাড়া বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে অন্য কোনো অনিবন্ধিত, অবৈধ, চোরাই পথে আসা কোনো মোবাইল ফোন কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য বিটিআরসি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে এই সিস্টেমটা অনেক বেশি কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমি বিটিআরসির কর্মকর্তাদের কাছে প্রত্যাশা করব, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনে এবং আগামীর সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিটিআরসিকে শুধু রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান নয় ফেসিলিটেটর হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। মোবাইল ফোন মার্কেটের মনোপলি ভেঙে দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক মার্কেট তৈরি করাসহ প্রধানমন্ত্রীর জনবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে শুধু রাজস্ব আয় নয়, বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিপ্লব, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আমাদের টেলিকম, আইএসপিএবিসহ বিটিআরসির সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের তরুণদের জন্য লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।

 তিনি বলেন, আমাদের আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭৩ সালে আইটিও এর সদস্যপদ নিয়েছেন, টেশিস প্রতিষ্ঠা করেছেন ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় স্থাপন করেছিলেন স্যাটেলাইটের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র।

পলক বলেন, আমাদের বর্তমান অর্জনগুলো বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন, ২০০৮ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৩৬ লাখ ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে ১৩ কোটি, ২০০৮ সালে টেলি ঘনত্ব ছিল ৩৪ শতাংশ ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে ১০৫ শতাংশ, ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ঘনত্ব ছিল ২.৫ শতাংশ ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৪ শতাংশ, ২০০৮ সালে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল ৭.৫ জিবিপিএস ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৮৬৫ জিবিপিএস, ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা, ২০২৩ সালে সেটা হয়েছে ৪০ টাকা মাত্র।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিটিআরসি ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখতে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে তিনটি লক্ষ্য দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে—  রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং তরুণ-তরুণীদের জন্য স্মার্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতেও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিটিআরসিকে শুধু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলে হবে না জানিয়ে পলক বলেন, আমাদের আরও একটু উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল কৌশল নিয়ে তরুণ প্রজন্ম ও উদ্ভাবকরা যেন কাজে লাগাতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে।

পলক বলেন, আমাদের একদিকে যেমন রাজস্ব পাওনা যাদের কাছে আছে সেগুলো আদায় করবো। কারণ বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক সংকট সেখানে রাজস্ব আয়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে। তবে অবশ্যই শুধু যারা রাজস্ব বেশি দেয় তাদের কাছে কাছে আরও বেশি আহরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ না করে আমাদেরকে রাজস্ব আহরণের যে সম্ভাবনা আছে সেগুলো বৃদ্ধি করতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমানে অত্যাধুনিক যে প্রযুক্তি আছে- ফাইভজি, রোবোটিক্স, আইওটি- এগুলোকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আমরা শুধু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ না খাওয়াই, এই পরিবর্তনের সঙ্গে উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে নেতৃত্ব দিতে পারি তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের গার্মেন্টস শিল্প ঝুঁকির মধ্যে আছে, আমরা লক্ষ্য করছি জর্মানি-জাপান যেভাবে রোবোটিক্স আইওটি ব্যবহার করা শুরু করেছে, তাতে যদি আমরা টেকনোলজি সম্পর্কে নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে না পারি তাহলে মারাত্মক একটা অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি।

আমাদের যে স্থানীয় শিল্প আছে সেখানেও বিটিআরসির একটা বড় ভূমিকা আছে জানিয়ে পলক বলেন, আজকে ১৭টি মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট বাংলাদেশে হয়েছে। এখানে যাতে আরও বিনিয়োগ হয়, যেখানে আমাদের ৫০ হাজারের মতো ছেলে-মেয়ে কাজ করছে। এখান থেকে যেন রপ্তানি আয় বাড়াতে পারি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারি এজন্য যে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (আইএমইআই) রয়েছে সেটা আমরা আরও কার্যকর করতে চাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে।

তিনি বলেন, স্মার্ট বিটিআরসি করার জন্য শুধু রেগুলেটর হিসেবে নয়, একটা স্মার্ট ফ্যাসিলেটর হওয়ার যে সুযোগ এসেছে তা যেন কাজে লাগাই।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।