কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি-খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি? কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তার বিখ্যাত কবিতা “মাগো ওরা বলে” কবিতায় তার খোকাকে বাড়ি আসতে, প্রলুব্ধ করতে চিঠিতে যে ডালের বড়ির কথা উল্লেখ করেছেন সেই ডালের বড়ি হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডাল মিশ্রিত কুমড়ো বড়ি।
ভোজন রসিকরা এই উপাদেয় খাবারটি পছন্দ করেন। এই কুমড়ো বড়ি তৈরী ও বিক্রি করে চাটমোহরের প্রায় শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেবল জীবিকা নির্বাহই নয়; ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ সব চাহিদার যোগান দিতে তাদের ভরসা কুমড়ো বড়ি বিক্রির টাকা।
চাটমোহর পৌর সদরের দোলং মহল্লার নিরঞ্জন ভৌমিক জানান, চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এই ছয় মাস কুমড়ো বড়ি তৈরী হয়। এর প্রধান উপকরণ ডাল। কুমড়ো বড়ি তৈরী করতে ডাল ধুয়ে মিলে ভাঙ্গানো হয়। ভাঙ্গানো ডালের গুড়ার সাথে সামান্য পরিমান কালোজিরা, মৌরি, জিরা, কুমড়ো মেশানো হয়। পরে বড় টিনের উপরিভাগ তেল দিয়ে মুছে তার উপর শুকাতে দেওয়া হয় ডালের কুমড়ো বড়ি।
ভালো করে শুকাতে তিন দিন রোদে দিতে হয়। বৃষ্টিতে ভিজলে অথবা না শুকানো অবস্থায় কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সব কুমড়ো বড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, এই এলাকার ২০টি পরিবারসহ চাটমোহরের প্রায় শতাধিক পরিবার কুমড়ো বড়ি তৈরী ও বিক্রি করে বছরের ছয় মাস জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমান এ্যাংকর ডালের কুমড়ো বড়ি ৯০ টাকা, খেশারী ডালের কুমড়ো বড়ি ১০০ টাকা এবং ছোলার ডালের কুমড়ো বড়ি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাটমোহর থানা বাজারসহ রেলবাজার, মির্জাপুর, ছাইকোলা, হরিপুর, ধানকুনিয়া, কাটাখালী হাটে এসব কুমড়ো বড়ি বিক্রি করা হয়।
ভোজন রসিক প্রবাসীরা দেশে বেড়াতে আসলে প্রবাসে ফিরে যাওয়ার সময় ডাল-কুমড়োর বড়ি সাথে নিয়ে যেতে ভোলেন না।
প্রায় ৪০ বছর যাবত কুমড়ো বড়ি তৈরী করে আসছেন দোলং মহল্লার উষা রাণী ভৌমিক। তিনি জানান, ডাল ভেজানোর জন্য মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠতে হয় আমাদের। আবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কাজ শুরু করতে হয়। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সংসারে কিছুটা বাড়তি স্বচ্ছলতার আশায় আমাদের বৌ-ঝিঁরাও এ কাজ করে থাকে। মূলতঃ মেয়েরা বড়ি তৈরী ও শুকানোর কাজ করে আর পুরুষেরা তা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে থাকে।
আইকেআর/ ওয়াই এ/এডিবি
