ন্যাভিগেশন মেনু

দুর্নীতি দমনে নিষ্ক্রিয় দুদককেই উকিল নোটিস!

বিআইডব্লিউটিসি'র দুর্নীতি ও অনিয়ম


সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন নিবেদন করে ব্যর্থ হওয়ার পরে  কিছু সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন থেকে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।

অ্যাডভোকেট ড. এম. আনিসুর রহমান গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিশ দেন। বাংলাদেশ পোস্ট-এর সাথে আলাপকালে তিনি  শনিবার(২৩ মার্চ) এটি নিশ্চিত করেন।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এবং একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালককেও একই বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

অ্যাডভোকেট আনিসুর তার মক্কেল বিআইডব্লিউটিসি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং বি-১৭০০)কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জাকির হোসেন-এর পক্ষে নোটিশটি প্রদান করেন ।

আইনি নোটিশে অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক ( ব্যানিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান এবং তাঁর অনুসারী আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে প্রায় ১৫ বছর ধরে বিআইডব্লিউটিসির নিয়ম-কানুন না মেনে তাদের পছন্দের কোম্পানি ও ব্যক্তিদের কাছে বিআইডব্লিউটিসির বিভিন্ন সম্পদ মেরামত ও ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন।

এছাড়াও বিআইডব্লিউটিসির বিভিন্ন  ভবন ও স্থান ভাড়া দিয়ে তাদের পছন্দের কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বিভিন্ন জাল বিল পাস করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিআইডব্লিউটিসিতে নিয়মবহির্ভূত ভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীও নিয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত এস এম আশিকুজ্জামান সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসাবে ফিডার পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত পূরণ না করেই ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল উপ-মহাব্যবস্থাপক (অস্থায়ী) পদে পদোন্নতি পান। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম হিসাবে প্রয়োজনীয়  তিন বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করেই তাকে আবার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক/যাত্রী ও ফেরি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে উকিল নোটিশে।

আরো জানা যায়, পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৬ ই জুন তিনি আবারো প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করেই বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) পদে পদোন্নতি পান।

আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে,  এস এম আশিকুজ্জামানের উপরোক্ত সমস্ত পদোন্নতি দেশের বিদ্যমান আইন ও বিআইডব্লিউটিসির বিধিমালা বিরোধী।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি বিআইডব্লিউটিসির শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সরকারের বিভিন্ন দপ্তর লিখিত অভিযোগ করেন জানান যে, বিআইডব্লিউটিসির কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

আইনি নোটিশে অভিযোগ করা হয় নিয়োগকৃত শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৭ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে এবং এর পেছনে ছিলেন এস এম আশিকুজ্জামান।

আরো অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, গত বছরের ১লা জুলাই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর বিধান অনুসরণ না করে পূর্ববর্তী ইজারাদারকেই পদ্মা নদীতে যাত্রী পরিবহনের জন্য পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ইজারা দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসিতে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম চলছে দাবী করে লিগ্যাল নোটিশে বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক(বাণিজিক) এস এম আশিকুজ্জামানের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এন্তার অভিযোগের মধ্যে আরো রয়েছে, এস এম আশিকুজ্জামান টেন্ডার আহ্বান না করে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ মেরামত করার জন্য নিয়োগ করেছেন। এরপর সেই জাহাজগুলিকে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অব্যবহারযোগ্য করে দেওয়া হয় এবং ফলস্বরূপ সেই জাহাজগুলিকে তার পছন্দের কোম্পানীর কাছেই সস্তা মূল্যে বিক্রি করা হয়  পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ আইন না মেনেই।

অ্যাডভোকেট আনিসুর-এর মক্কেল গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নোটিশ প্রাপকদের কাছে বেশ কয়েকটি লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আজ অবধি তাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দুদক বরাবর দেওয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে।

নোটিশের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসির  স্বার্থ এবং জনস্বার্থ সংরক্ষণের জন্য উল্লিখিত দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশ গ্রহীতাদের অনুরোধ করা হয়েছে ।

অভিযুক্ত এস এম আশিকুজ্জামান রবিবার ( ২৪ শে মার্চ) বাংলাদেশ পোষ্টের সাথে তাঁর বিরুদ্বে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “ এই সব অভিযোগই মিথ্যা ও বানোয়াট।’’

পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট ড. এম. আনিসুর রহমান বলেন, "আমি আমার মক্কেল এবং পরবর্তী কর্মপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারবো না।"

শনিবার বিআইডব্লিউটিসি শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জাকির হোসেন বাংলাদেশ পোস্ট-কে বলেন, নোটিশ গ্রহীতারা আইনি নোটিশের জবাব দেননি। পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিসি শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মির্জা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান দুর্নীতি বন্ধে মামলা করা হবে বলে বাংলাদেশ পোস্ট-কে জানিয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিসি'র চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, "আমি এই আইনি নোটিশ সম্পর্কে অবগত নই। আমি ওই ঘটনার পরে যোগদান করেছি"। ''সাধারণত আমরা সব আইনি নোটিশেরই জবাব দিই,'' তিনি  বলেন।

বাংলাদেশ পোস্ট-এর সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, আইনি নোটিশ কোনো মামলা নয়। মামলা করার আগে এটি দেয়া হয় এবং বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এবিষয়ে বিস্তারিত  তথ্য দিতে পারেন  তিনি জানান।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি আশিস কুমার দে বলেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও দুদক-এর ধীরগতির নীতি গ্রহণ করা দুঃখজনক।

তিনি  আরো বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মৌন নীতি অবলম্বন করা আরও বেশি দুঃখজনক।