ন্যাভিগেশন মেনু

দোয়া ইউনুস কি? কেন এবং এর ফজিলত কি ?


সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের জন্য দোয়া ইউনুস খুবই ফজিলতপূর্ণ। যেকোনো বিপদের সময় ও অস্থিরতা দূরীকরণে এই দোয়া পড়া সুন্নত। আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইউনুস (আ.) জোকলহং বিপদে পড়তেন তখন এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন । আর এই দোয়ার ফলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিতেন । বিভিন্ন সহীহ হাদিসে দোয়া ইউনূস ও এর ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়।  

দোয়া ইউনূসের প্রেক্ষাপট : 

হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর অন্যান্য প্রেরিত নবীদের মতোই একজন সম্মানিত নবী। কোরআনের সর্বমোট ১১৪ সূরার ১০ নম্বর সুরার নাম  তার নামে। সকল নবীদের মতো তারও সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল, এক আল্লাহর দিকে তার জাতিকে আহ্বান করা। মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া। আল্লাহর একত্ববাদ ও ইনসাফের কথা প্রচার করা।  মৃত্যুর পরের যোবন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।

অন্যান্য নবী রাসূলগণের মতো তার ক্ষেত্রেও আল্লাহর দিকে মানুষকে আহব্বান করা হয়ে উঠে বিপদের কারণ। দেব দেবীর মূর্তি পূজা ছেড়ে ইসলামের ছায়াতলে ফায়ার আসতে তিনি তার কওমকে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু পূর্বের ন্যায়  তারও আল্লাহকে চিনে না এবং ইউনুস (আ:) এর ডাকে সাড়া দেয়নি। এর ফলে তিনি নিরাশ হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। (তুরুকুল ইসলাম, লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা; ২০-০৮-২০২০)

যাওয়ার পথে আল্লাহ তাআলা তাকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তাকে সমুদ্রে ফেলা হয়।  তিনি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হলে একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেলে। তবে আল্লাহ তাআলার রহমতে সেই বিশাল সমুদ্রের সেই দানবাকৃতির ম্যাচটিও  আল্লাহর নবীকে কোন ক্ষতি করতে পারেনি। 

সেই সময় মাছের পেটের অন্ধকারে বসে এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর নবী অনবরত আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য দোয়া করতে থাকেন। এই দোয়ায় " দোয়ায়ে ইউনুস " বা বিপদ থেকে মুক্তি লেভার দোয়া হিসেবে পরিচিত

ইউনুস (আ.)-এর সেই দোয়াটি হলো

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।'

অর্থ : 'তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।'

দোয়া ইউনুস-এর উপকারিতা

হাদিসে এবং কুরআনের তাফসীরে এই দোয়া ইউনূসের অনেক ফজিলত বর্ণিত আছে.

- আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানদের জন্য সেই মাছের পেটের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন :

وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ - فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ

'আর মাছ ওয়ালার (ইউনুস আলাইহিস সালাম) কথা স্মরণ করুন। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন-

 لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

'লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।'

অর্থ : তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।'

অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।' (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)

দোয়া ইউনুস পাঠের ফজিলত

দোয়া ইউনুসের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। মহান আল্লাহর প্রিয় নবী  হযরত ইউনুস আলাহিস সালাম  এই "দোয়া ইউনুস" পাঠ করেই আল্লাহর রহমতে মাছের পেট এর বিপদ থেকে থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।  যদি কোন মুসলমান যদি বিপদে পরে সেটা থেকে রক্ষার জন্য খাস নিয়তে দোয়া ইউনুস কয়েকবার পড়ে দোয়া করে তবে মহান আল্লাহ তার নিজ কুদরতে সেই ব্যক্তির বিপদ দূর করে তাকে বিপদমুক্ত করেন।

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এই দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা কি কেবল ইউনুস (আ.)-এর জন্যই প্রযোজ্য, না সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য? জবাবে প্রিয়নবী

হজরত মুহাম্মদ  (সা.) বলেন,

তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য দোয়াটি বিশেষভাবে কবুল হলেও এটা সব মুসলিমের জন্য সবসময় কবুলের ব্যাপারে প্রযোজ্য। তুমি কি কোরআনে পাঠ করোনি, ‘ওয়া কাজালিকা নুনজিল মুমিনিন- আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।

(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে , যে ব্যক্তি দৈনিক এক হাজার বার দোয়া ইউনুস পড়বে আল্লাহ তার পদমর্যাদা সমুন্নত করবেন। আল্লাহ তার কামাই রোজগারে বরকত দান করেন। বিপদ -আপদ, বালা- মুসিবত, মানসিক অশান্তি ও কষ্ট দূর করেন। তার জন্য সব রকম কল্যাণের দ্বার খুলে দেন। শয়তানের প্ররোচনা থেকে তাকে রক্ষা করেন।

এ দোয়া এক লাখ পঁচিশ হাজার বার পড়লে (যেটা খতমে ইউনুস হিসেবে পরিচিত) সব ধরনের অপকার থেকে রক্ষা, বিপদ-আপদ থেকে দূরে থাকা এবং রোগ-শোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে।

আরো পড়ুন : কবর জিয়ারতের দোয়া - সঠিক-শুদ্ধ-সুন্নাতি পদ্ধতি