ন্যাভিগেশন মেনু

পরিবারের প্রয়োজনে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন তারা


চল্লিশ বছর বয়সী বিধবা ছাকেন খাতুন একজন নির্মাণ শ্রমিক। রাস্তা-ঘাট দালান-কোঠা নির্মাণ কাজে পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করেন তিনি।

অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের বছর পাঁচেক পর স্বামী সাহেব আলীর মৃত্যু হয়। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার তার।  এরপর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পঁচাভিটা গ্রামের এক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ছাকেনের দ্বিতীয় স্বামী কুষ্টিয়া ছেড়ে ছাকেনকে নিয়ে পাবনার চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। প্রায় দুই বছর আগে ছাকেনের দ্বিতীয় স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান।

ছেলে সাদ্দাম বিয়ে করেছে। সাদ্দামের এক ছেলে এক মেয়ে। দালানের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করতো সাদ্দাম। কয়েক মাস আগে কাজে যাবার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয় সাদ্দাম। ছেলে, ছেলের বউ, দুই নাতি-নাতনী এবং নিজের পেটের ভাত-কাপড়সহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর যোগান দিতে হচ্ছে ছাকেনকে।

ঘরে বসে থাকলে তো সংসার চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে ৫ জনের এ পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য রাস্তা নির্মাণের মতো ঝুকিপূর্ণ কাজ করছেন তিনি।

লবিজানের বয়স ৩৫ বছর। এ বয়সেই চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ।  প্রায় ২০ বছর আগে আলম নামক একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো তার। তাদের ঘরে জন্ম নেয় দুই ছেলে এক মেয়ে। তিন সন্তানের জন্মের পর আলম ফের অন্যত্র বিয়ে করে লবিজানকে ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রী-সন্তানদের কোনো দায়িত্ব পালন করেন না তিনি। তাই বৃদ্ধ মা ও তিন সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে হয় লবিজানকেই। পাঁচজনের সংসারের সকল প্রয়োজন মেটাতে লবিজান সম্পৃক্ত হন নির্মাণ কাজে।

পঁয়ত্রিশ বছর বয়স্ক মঞ্জুয়ারার স্বামীর নাম কোরবান আলী। প্রায় পাঁচ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় কর্মক্ষমতা হারান তিনি। বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অসুস্থ স্বামী, এক ছেলে এক মেয়েসহ চারজনের এ পরিবারের সকল প্রয়োজন মেটাতে হয় মঞ্জুয়ারাকে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে নির্মাণ কাজের সাথে যুক্ত হন মঞ্জুয়ারা।

ছাকেন, লবিজান ও মঞ্জুয়ারা এ তিন নির্মাণ শ্রমিককে গত সোমবার চাটমোহর পৌরসদরের ডি এ জয়েন উদ্দিন স্কুলের সামনে রাস্তা নির্মাণ কাজে দেখা যায়।

মঙ্গলবার তারা কাজ করেন পৌর সদরের নার্সারী মোড়ের রাস্তায়। এদের মধ্যে ছাকেন মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে ঘর করে বসবাস করছেন। এছাড়া অন্য কোনো জমাজমি নেই। ৩ শতাংশ খাস জমিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মঞ্জুয়ারা। নিজের কোন জায়গা না থাকায় লবিজান অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন।

আলাপচারিতায় তারা জানান, পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মেটাতেই আমরা কাজ করি। কাজ না করলে যে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা নিজেদের নারী না ভেবে মানুষ ভাবি।

আইকেআর/ওয়াই এ /এডিবি