ন্যাভিগেশন মেনু

পুরুষদের অধিকার দাবিতে কলকাতায় ‘মেন কি বাত’


চিরাচরিতভাবে আমরা সবাই জানি পুরুষদের হাতে নারীরাই হরদম নির্যাতিত হয়। কিন্তু স্ত্রী’র হাতে স্বামী যে নির্যাতিত হয়, তা ক’জনাই বা জানি।

এ কাণ্ড কিন্তু একেবারে নেহাত কম নয়। বুদ্ধিমান স্বামী তার স্ত্রী’র হাতে নির্যাতিত হলেও কিল খেয়ে হজম করার মতো চুপচাপ হয়ে যান। কিন্তু আর ক’দিন এভাবে হজম করা যায়। তাই এবার পুরুষকূল সোচ্চার।

পুরুষদের অধিকার নিয়ে জোরদার আন্দোলন শুরু হচ্ছে ভারতে। আর  তার নেতৃত্বে সেই বাংলা। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ব্ল্যাকমেলিং করে অর্থ আদায়, পুরুষের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায় বেড়েই চলেছে। এই বাংলাতেই ৪৯৮এ ধারায় সবচেয়ে বেশি বধূ নির্যাতনের মিথ্যা মামলা হয়।

পুরুষদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্য অপরাধের সংখ্যাও বেশি। মিথ্যা মামলার বহর এত বেশি কেন? কেন পুরুষরা নিরাপদ নয়? কেন তাদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে? বাঙালি মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি বলে? নাকি স্বনির্ভরতার হার বেশি?

আজ, শনিবার উত্তর খুঁজতে বসেছে কলকাতা। কলকাতার একটি হোটেলে সকাল ন’টা থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় সম্মেলন ‘মেন কি বাত’ (Men Ki Baat)। তাতেই পুরুষ অধিকার নিয়ে চলছে সওয়াল।

বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই আয়োজনের আয়োজক ‘অল বেঙ্গল মেনস ফোরাম’ । দেশ-বিদেশ থেকে ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তাদের কাছে শুভেচ্ছাবার্তা এসে পৌঁছেছে। শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন বিশ্ব পুরুষ দিবসের সূচনাকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডা. জেরম তেলাকসিং ও আফ্রিকান বয় চাইল্ড নেটওয়ার্কের অধিকর্তা রোজমেরি মুথোনি।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই সভার মধ্যমণিও একজন মহিলা, নন্দিনী ভট্টাচার্য । তাঁর উদ্যোগেই কলকাতায় বসছে এই আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন। পুরুষদের অধিকার নিয়ে তিনিই প্রথম কলকাতা তথা বাংলাকে সচেতন করেন।

বোঝান, পণপ্রথার মিথ্যা মামলা ও বধূ নির্যাতনের ভিত্তিহীন মামলা কীভাবে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে আত্মহননের পথে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে ছিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। বক্তা হিসাবে রয়েছেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ গুহঠাকুরতা, সৌম্যদীপ রাহা, গায়ক অনিন্দ্য বোস, প্রাক্তন ফুটবলার তরুণ দে, চিকিৎসক ডা. তনয় মাইতি, প্রাক্তন আমলা মৃণাল বিশ্বাস, অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ প্রমুখ।

নন্দিনী জানান, এ দেশে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার। আত্মহত্যার হার পুরুষের মধ্যে অনেক বেশি। তা সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, ডিভোর্সি হোক বা বিপত্নীক। তাঁর বক্তব্য, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলার চাপেই পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার বাড়ছে।

২০১৯ সালে ৬৬,৮১৫ জন বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা অর্ধেকেরও কম (২৫,৯৪১)। ‘সেপারেটেড’ পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন ৬৭২ জন, মহিলা ২৯০। সব বিভাগেই আত্মহত্যায় পুরুষদের হার বেশি। পুরুষের এই মানসিক স্বাস্থ্যের ভগ্নদশা কাটানোর পথ খুঁজবে ‘মেন কি বাত’।

পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যই এবারের পুরুষ দিবসের থিম।নন্দিনীর পর্যবেক্ষণ, সবাই নারী অধিকার নিয়ে চিৎকার করে চলেছেন। এটা কেউ বুঝতে পারছেন না, পুরুষ অধিকার খর্ব হলে নারীরাও সুরক্ষিত থাকবে না। একজন পুরুষ মিথ্যা মামলার জাঁতাকলে পেষাই হলে তাঁর মা, বোন, দিদি, স্ত্রী, কন্যাও নির্যাতনের শিকার হন।

এস এস