ন্যাভিগেশন মেনু

ভোটার তালিকায় নাম, ৬০০ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা


তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে কক্সবাজারে ৬০০ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অনুমতিবিহীন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে এ প্রতারক চক্রটি।

ইতিমধ্যে চক্রটি কক্সবাজারের কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসে সংযুক্ত করেছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলাতেই অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন অফিস। এদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তিন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা। তিনি বাদী হয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করে এজাহারে আসামি করা হয়েছে।

 আরো পড়ুনঃ

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চিনকে নিয়ে নিউইয়র্কে মায়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ঢাকা

রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাইয়ে দেয়া রহস্য উদঘাটনে ২ প্রশ্ন

বাকি আসামিদের অজ্ঞাতনামা তালিকায় রাখা হয়েছে। আসামিরা হল- কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার বাসিন্দা ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু, মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে ইয়াসিন, টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আবুল হাশেমের ছেলে আবদুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ(৩৭) এবং কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ির মৃত ওলা মিয়ার ছেলে শামসুর রহমান।

এদিকে এজাহারের প্রথম তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জাননিয়েছে পুলিশ। নাগরিক তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি যাচাই করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। চক্রটি ইতোমধ্যে অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে অবৈধভাবে নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেসে সংযুক্ত ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিবন্ধনভুক্ত করেছে।

কক্সবাজারের বাকি সাত উপজেলার নাগরিক তালিকাও যাচাই করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ধারণা করছে, রোহিঙ্গারা চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সঙ্গে হাত করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে।

ইতোমধ্যে শুধু কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৫৯৭ রোহিঙ্গা অবৈধ পন্থায় ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে।এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানান, ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ এর ১৮/১৯ লঙ্ঘন করায় বাংলাদেশে ভোটার হওয়া এসব রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মামলার বাদী শিমুল শর্মা আরও জানান, অভিযুক্তরা চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাতনামা লোকজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ পন্থায় নানা কৌশলে ভোটার নিবন্ধন করে আসছে। তারা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি  প্রতারকচক্রের অপরাধের বিষয়ে জানতে পারে নির্বাচন কমিশন। এর পর অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। নির্বাচন অফিসের সার্ভারের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের নাম, ঠিকানা নির্বাচন কমিশনের ভোটার নিবন্ধন তথ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ভোটার নিবন্ধন ল্যাপটপ আইডির সঙ্গে মিল নেই।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, অবৈধপন্থায় বাংলাদেশি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছয় শতাধিক রোহিঙ্গা।

এ ঘটনায় পাঁচজনকে এজাহারভুক্ত করে ৬০০ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে। কীভাবে এসব রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।

আরো পড়ুনঃ

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা পেশ হতে পারে

পাশাপাশি তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশের সিম ও মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জেরে হালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে বিটিআরসি। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মায়ানমার থেকে সিম কার্ড এনে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।

এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে মায়ানমারের ২১০টি সিমসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশের পুলিশ।টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থলবন্দরের গেট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

 প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার বিকালে স্থলবন্দরের গেট অতিক্রমের সময় দায়িত্বরত গার্ডরা সিম কার্ডসহ মায়ানমার থেকে আসা ট্রলারের শ্রমিক সলিমকে আটক করে। তার কাছ থেকে কিউএমপিটি নামের একটি মায়ানমার কোম্পানির সিম উদ্ধার করা হয়।

 এ সময় সিম গ্রহণ করতে আসা গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ জামতলী শিবিরের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা রবি আলমকে আটক করা হয়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বাংলাদেশের মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও মাদক পাচার চালিয়ে যাচ্ছে।  

এজন্য বিটিআরসি সম্প্রতি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে সিম এনে সেগুলো ব্যবহার করছে। এসব সিম উচ্চ নেটওয়ার্ক সম্পন্ন হওয়ায় সহজে উভয় দেশের সীমান্তের অনেক ভেতর থেকে ব্যবহার করা যাচ্ছে।