ন্যাভিগেশন মেনু

মহিমান্বিত রাত্রি শবে কদর


আরবি 'লাইলাতুল' শব্দের অর্থ রাত্রি। 'শব' ফার্সি ও উর্দু শব্দ, এর অর্থও রাত্রি। কদর শব্দের অর্থ সম্মান, মহাসম্মান, মর্যাদা, সমাদর, খাতির। আরেক অর্থ, পরিমাণ ও তকদির পুণ:নির্ধারণ।

শবেকদরে আল কুরআন নাজিলের সুচনা হয়। আর এজন্য এ রাতের সম্মান অধিক বেড়েছে। তাছাড়া এ রাতের ইবাদতকে আল্লাহ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন এবং ইরশাদ করেছেন,"নিশ্চয়ই আমি এ কুরআন নাজেল করেছি মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কি? 

মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেস্তাগণ এবং রুহ অবতীর্ণ হয়, তাদের রবের আদেশক্রমে। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত" (কদর: ১-৫)। 

ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে হজরত মুহাম্মদ (স.) এর অনুসারিদের সম্মান অধিক করে দেয়া হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারি আল্লাহ তা'আলা তার প্রশাসনের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেস্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন।

এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, ধন-দৌলত, কপালের সব ভালো মন্দ লেখা থাকে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা মতে, "কদরের রাতে আল্লাহ এক বছরের জন্য বান্দার রুজি-রিজিক, হায়াত মউত ও অন্যান্য তকদীরি ব্যাপারে সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ও সরবরাহের দায়িত্ব ফেরেস্তাদের দিয়ে দেন" ( কুরতুবি)।

আল্লাহ ঘোষণা করেন,  "এ রাতে প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ  বিষয় স্থিরীকৃত হয়" (দুখান: ৪)। আল কুরআনের সুরা দুখানে শবেবরাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, "লাইলাতিম মুবারাকাতিন বা বরকতময় রাত" আর সুরা কদরে এসেছে, "লাইলাতিল কদর বা মহিমান্বিত রাত"। 

মহিমান্বিত শব্দের কতক অর্থ হলো- গৌরবান্বিত, রাজসিক, জাকাল, সমৃদ্ধ, মনোহর, অপরূপ, ঐশ্বর্যময় প্রভৃতি। আর বরকতময় অর্থ- সৌভাগ্য, কল্যাণকর, কল্যাণময়, শুভ, ভাগ্যবান, মুক্তি, ক্ষমা লাভ ইত্যাদি। 

সুরা দুখানের বেশ কয়েকটি আয়াত অনুসন্ধান করলেই পরিস্কার বোঝা যায়, এখানে মহান আল্লাহ শবেবরাত নিয়ে কথা বলেছেন। আর সুরা কদরই জানান দিয়ে দেয় তার মহিমার বাণি!

শবেকদর রমজানের শেষ ১০ দিনের যেকোনো বেজোড় রাতে সংঘটিত হয়। এ নিয়ে মতপার্থক্য নেই। হজরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসুল (স.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তা খোঁজ করতে চায়, সে যেন তা শেষ সাত রাতেই খোঁজ করে" (বুখারি: ১৮৮৮)। ওবাদা ইবনে সামেত (রা.) বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, "তোমরা লাইলাতুল কদর শেষ দশ দিনের পঞ্চম, সপ্তম ও নবম (২৫, ২৭ ও ২৯) রাতে খোঁজ কর" (বুখারি: ১৮৯৬)।

উপমহাদেশে প্রথম ইসলাম সিনায় ধারণ করে সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ দেখাতে আসেন হজরত খাজাবাবা আজমেরি (র.) সাত থেকে নয়শত শতকে এবং অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও ইসলাম প্রচারে সমর্থ হন। এক পযায়ে ধর্ম যুদ্ধেও অবতীর্ণ হতে হয়। 

হিযরতের মত ঘটানা ঘটে। তারাকন্দ পাহাড়ের সেই ধর্মযুদ্ধ আর হিযরতের সাখখী। শুরু হয় এই অঞ্চলে ইসলাম তথা মুসলমানদের যাত্রা। 

তারপর হজরত রাসুল (স.) এর শতশত উত্তরসুরি উলামাদের পরামর্শ মোতাবেক ইবাদতসমুহ পালিত হয়ে আসছে এতদাঞ্চলে। মুসলমানদের ধারণা ও ঈমানে এটা স্থির হয়ে গেছে যে, ২৭ রমাদানই হচ্ছে লাইলাতুল কদর। 

শবেকদরের মোনাজাত এই যে, হে আল্লাহ! জীবনভর নফসের খায়েসে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যত ভুল- ত্রুটি করেছি তার জন্য ক্ষমা চাই। আপনি আমাদের মালিক, আপনি ছারা আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব?

আমাদের কর্মের দিকে না তাকিয়ে আপনার রহমতের দরিয়ার দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে মাফ করে দিন। বিগত বছরের সবরকম অন্যায়ের জন্য আল্লাহর সামনে চোখের পানি ফেলে কাকুতি মিনতি করে আগামির ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করার দরখাস্ত করুন এবং কৃত অন্যায় আর না করার প্রতিজ্ঞা করুন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (স.) এরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবেকদরের নামাজ পড়বে এবং রমাদানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে" (বুখারি: ১৭৮০)।

"শবেকদরে সূর্যাস্তের পরপরই আল্লাহ তা'আলা আরশে আজিম থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, কে আছ পাপী ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দেব, কে আছ দুঃখী আমি দুঃখ মোচন করে দেব, কে আছ রোগী আমি সুস্থ করে দেব, কে আছ দায়গ্রস্ত আমি দায়মুক্ত করে দেব, কার রিজিকের প্রয়োজন, আমি রিজিক বাড়িয়ে দেব। 

এভাবে চলতে থাকে সকাল পর্যন্ত। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের জন্য মানুষের হায়াত, মউত, রিজিক-দৌলত বরাদ্দ হয় এবং ভাগ্য চূড়ান্ত হয়।"( সূত্রঃ প্রথম আলো)। 

এ রাতে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ পাঠ, দরূদ ও মিলাদ পাঠ, মুর্শিদের সাক্ষাৎ গ্রহণ, পিতা-মাতা, শ্বশুর শাশুড়িকে পছন্দের খাবার দেয়া, ইন্তেকাল করলে কবর জিয়ারত করা। 

আওলিয়ায়ে কেরামের রওজা মুবারক জিয়ারত করা, দান-সদকা করা, বুকের মানিকের জন্য নিজ গৃহে ফিরনি ও গোস্ত পোলাও রান্না করা, মসজিদের ইমাম সাহেবকে উত্তম খাবার দেয়া এবং অধিক সময় মুরাকাবা ও কলবে জিকির করা শ্রেয়।

হে আল্লাহ! কদরের এই রাতে তোমার দরবারে গুনাহগাররা ফরিয়াদ করি, বিশ্ববাসীকে ক্ষমা কর; করোনা মহামারি থেকে আমাদের মুক্তি দাও।

হে দয়াময় প্রভু, কদরের দিবসে তোমার যেসব মাহবুব বান্দার শুভ জন্ম হয়েছে, তাদের মধ্যে যিনি তোমার কাছে সবচে প্রিয় এবং মায়ার নবি দয়ার নবি (স.), যুগের মুজাদ্দিদ এবং শেষ জামানায় আগমনকারী কাণ্ডারি ইমাম মাহদি (আ.) এর উসিলায় আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন কর এবং আমাদের জন্য কদর নসিব করুন।

আমাদের সীমিত চেষ্টাকে কবুল করুন।

আমিন।

এস এস