ন্যাভিগেশন মেনু

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ফের আগুন, ৩ বছরে ১৬ বার


ফের আগুন লাগলো বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে।এবার ঈদুল আযহার আগে মঙ্গলবার রাত (২০ জুলাই)পৌণে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী   শিবিরের ৯ নম্বর ক্যাম্পের বি-ব্লকে আগুন লাগে।

গতরাতে আগুনে কোন হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও ৩০ থেকে ৪০টি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার-৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, দমকল কর্মী ও এপিবিএন সদস্যদের সহযোগিতায় খুব দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এর আগে ৩০ থেকে ৪০টির মতো ঘর পুড়ে গেছে।

অবশ্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানীর ঘটনা নতুন নয়। এই নিয়ে গত ৩ বছরে অন্তত ১৬টি অগ্নিকাণ্ডে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়েছে।একবার আগুনেই ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। সরকারি হিসেবে ছিল ১১ জন।

২০১৮ সালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এক অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের মা-সন্তানসহ ৪ জন মারা যায়।প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়ে ৪৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কেন বারবার অগ্নিকাণ্ড ঘটছে তা অজানাই রয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরের

এ বছরের ১৩ জানুয়ারি টেকনাফে নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ৫৫২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এর চারদিন পর ১৭ জানুয়ারি উখিয়া পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুণ লেগে চারটি লার্নিং সেন্টার পুড়ে যায়।

এরপর ১৯ মার্চ উখিয়ার কুতুপালং ১৭ নং রোহিঙ্গা শিবিরের ৭৩ নাম্বার ব্লকে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত সেভ দ্য চিলড্রেন হাসপাতালে এবং ১৭ মার্চ টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে কয়েকটি বাড়ি ভস্মীভূত হয়।

গতবছর ১২ মে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০০ বসতি পুড়ে যায়। এর ৫দিনের মাথায় ১৭ মে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে পুড়ে ৩৬২টি বসতঘর ও ৩০টি দোকানপাট পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় আরো অর্ধ-শতাধিক রোহিঙ্গা অগ্নিদগ্ধ হয়।

গত বছরের ৮ অক্টোবর কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সি-ব্লকে আগুণ লেগে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে যায়। একই বছরের এপ্রিল ২৬ কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ১৪টি দোকান, ১ এপ্রিল টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল (পুটিনবনিয়া) রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকান্ডে স্কুলসহ ১৫ টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়।

২০১৯ সালেও রোহিঙ্গা শিবিরে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে অতীতের সবচেয়ে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারির ঘটনাটি সবচেয়ে হৃদয় বিদারক। এদিন উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট এলাকার রোহিঙ্গা আবদুর রহিমের তাবুতে আগুণ লেগে তার ঘুমন্ত স্ত্রী নুর হাবা (৩০), সন্তান আমিন শরীফ (৮), দিলশান বিবি (১২) ও আসমা বিবি (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) কয়েকটি সেনাচৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী।

এসময় প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নতুন-পুরাতন মিলে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

এসএস