ন্যাভিগেশন মেনু

৩১তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সার্টিফিকেট ও এ্যাওয়ার্ড প্রদান

হকারদের পুনর্বাসন এবং হলিডে মার্কেট চালু করা হবে: চসিক মেয়র


দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত ৩১তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৪ এ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সার্টিফিকেট ও এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।

চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, বিশেষ অতিথিবৃন্দ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ কমিটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মাহফুজুল হক শাহ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, মাহবুবুল হক মিয়া, মোঃ রেজাউল করিম আজাদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, আখতার উদ্দিন মাহমুদসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি সিটি মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বিশেষ করে কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে এই নগরকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু দখলে-দূষণে যদি কর্ণফুলী বুড়িগঙ্গা নদীর মতো হয়ে উঠে তাহলে এই নগরের অস্তিত্বই থাকবে না। কর্ণফুলীকে বাঁচাতে সকলকে সোচ্চার হতে হবে, যেখানে সেখানে ময়লা ও পলিথিন না ফেলার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশহিসেবে ৫৬টি খালের মধ্যে ৩৬টি খাল সংস্কারের কাজ চলছে। বাকী খালগুলোও কীভাবে উদ্ধার করা যায় সেজন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। পরবর্তীতে তা উদ্ধারেও উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নগরীকে বাসযোগ্য ও জনগণের চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়ে সেজন্য অবৈধ ও দখলকৃত ফুটপাত উদ্ধার করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত হকারদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য হলিডে এবং নাইট মার্কেট চালু করার চিন্তা ভাবনা করছে কর্পোরেশন। তাছাড়া চট্টগ্রামকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় এবং সত্যিকার বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিকমানের কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টার করার জন্য চেষ্টা করছে সিটি কর্পোরেশন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চিটাগাং চেম্বারের গুরুত্ব ও ভূমিকা অন্যতম উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। গত ২৫ বছরে চট্টগ্রাম শহরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যারফলে টু টাউন ওয়ান সিটির আদলে চট্টগ্রামকে সম্প্রসারণেরও সুযোগ তৈরী হয়েছে। তাই চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তুলতে হবে। যাতে জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তিনি সর্বজনীন পেনশন স্কীম সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে আগামীতে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অসহায় পিতা-মাতাকে ফেলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সর্বজনীন পেনশন স্কীমের আওতায় আনতে এবং সকলের কাছে সর্বজনীন পেনশনের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহবান জানান।

বিশেষ অতিথি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। এছাড়াও চট্টগ্রামকে বৈশ্বিক অবস্থানে তুলে ধরতে হলে আন্তর্জাতিকমানের বাণিজ্য মেলারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি নগরীতে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে বাস, ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, ডাম্পিং স্টেশন, ট্রাফিক সিগন্যাল আধুনিকায়ন ও রিক্সা মুক্ত সড়ক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম মহানগর বসবাস উপযোগী করে তুলতে এবং নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাতসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সমাজ। জনসাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ করে ফুটপাতকেন্দ্রিক এ সকল ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও এ থেকে সরকারের কোন রাজস্ব আয় হয় না। তাই এ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসনের জন্য হলিডে ও নাইট মার্কেট চালু করা গেলে সেখান থেকেও রাজস্ব পাবে সরকার। চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও ট্রেড ফেয়ারের জন্য জায়গা বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

মেলা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এ বছরও চিটাগাং চেম্বার স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের জন্য ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বিক্রয় করছে।

চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২৪ এর চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন মেলা সফলভাবে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ, আগত দর্শনার্থী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, নগর বিশেষ শাখা ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠান শেষে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে জুরি বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়ন, স্টল এবং ক্রিয়েটিভ এ্যাক্টিভিটিস প্রতিষ্ঠানকে এ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরীতে টি. কে. গ্রুপ প্রথম, আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস লিঃ দ্বিতীয় এবং নিউজিল্যান্ড ডেইরী প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড তৃতীয়; স্টলসমূহের মধ্যে ওয়েলবার্গ, ওয়াকারু ও রাজ টেক্সটাইল (রাজ লুঙ্গি) যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে। এছাড়া ক্রিয়েটিভ এ্যাক্টিভিটিস হিসেবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সেরা নির্বাচিত হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলা চলবে।