পাবনা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বে সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের নিভূত পল্লীতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন শিক্ষা অনুরাগী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আলহাজ সিরাজ উদ-দৌলা। একই আঙ্গিনায় নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন একাধিক বহুমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নিজ গ্রামে মেডিক্যাল কলেজ ও বৃদ্ধা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা পোষণ করছেন তিনি।
সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের দাড়ামুদা গ্রামের মরহুম খোয়াজ উদ্দিনের ছোট ছেলে আলহাজ সিরাজ উদ-দৌলা ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন দুর্বৃত্তের হাতে বাবার মৃত্যুর পর মামা শাহাদত হোসেনের আশ্রয়ে যান। বাবা ও মামার শাহাদতবরণে তার জীবনে চলে আসে ভাগ্যের আরেক নির্মমতা। মাত্র ৬ বছর বয়সেই হারান মাকেও। সব হারানোর পরও থেমে থাকেননি তিনি। সিরাজ উদ-দৌলা প্রাথমিক, দাখিল ও আলিম পাশ করে ১৯৯১ সালে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলা (সম্মান) ডিগ্রি এবং ১৯৯২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেন।
১৯৯৪ সালে পাবনা আমিন উদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৪ সালে বিএড এবং ২০০৬ সালে এমএড ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে অন্ধকার-কুসংষ্কার ভরা এলাকায় সংষ্কার করে আলোয় আনতে ভাই আতাউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় দাড়ামুদা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পাশাপাশি গ্রামে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপন করেন।
১৯৯৪ সালে পারিবারিক ১ একর জমি দান করে দাড়ামুদা খোয়াজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে এলাকার গরীব ও বেকার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য ভোকেশনাল (কারিগরি) স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ঝরেপড়া বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি প্রোগ্রাম চালু করেন।
২০১০ সালে গ্রামাঞ্চলের পিছিয়েপড়া নারীদের কল্যাণে কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্যে দাড়ামুদা খোয়াজ উদ্দিন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড মহিলা বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষি শিক্ষা অধ্যায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালে সাঁথিয়া কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট দাড়ামুদা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গরীব ও বেকার শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি পারদর্শীতা অর্জনে একই গ্রামে ২০১৭ সালে সিরাজ উদ-দৌলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়াও মসজিদ, ঈদগা মাঠ, জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য লাইব্রেরি, খেলাধুলা ও সামাজিক কল্যানের জন্য ক্লাব, কবরস্থানসহ সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি ১৯৯৮ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নন্দনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সিরাজ উদ-দৌলা। ২০০২ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জোড়গাছা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন।
২০০৮ সালে দাড়ামুদা গ্রামে তারই প্রচেষ্টায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে গ্রামে কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন গ্রামে শতভাগ স্যানিটেশন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন। এই শিক্ষানুরাগী সিরাজ উদ-দৌলার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর লেখাপড়ার মান ও ফলাফলের দিক দিয়ে উপজেলার মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে চলেছে। খেলাধুলায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় দিবসগুলো পালনেও এগিয়ে রয়েছে তারা।
অজপাড়াগাঁয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অর্জন করে দেশে ও দেশের বাহিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের ও দেশের উন্নয়নে অংশ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে শিক্ষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাডভোকেট, প্যারামেডিক্যাল চিকিৎসক, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী , মেরিন প্রকৌশলী, নার্স, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিডিআর, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন পেশায় দেশে ও দেশের বাইরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
আলহাজ সিরাজ উদ-দৌলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিষ্ঠান গড়তে সহযোগীতা করেছেন আরও সহযোগীতা করে এখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি বৃদ্ধা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করার ইচ্ছা পোষন করেন।
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব সিরাজ উদ-দৌলা শিক্ষা খাতে বিশেষ অবদানের জন্য গৌরবময় কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ”মাদার তেরেসা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯”, ”একাত্তরের স্মৃতিপদক ২০১৯”. ”শেরে বাংলা ফজলুল হক স্মৃতি পদক ২০২১”, ”ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন স্মৃতি সম্মাননা ২০২১” ভাষা শহীদ স্মৃতি সম্মাননা ২০২১” ও স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
কে এস/ এস এ/এডিবি