ন্যাভিগেশন মেনু

অবশেষে স্থগিত করা হলো রাজাকারের তালিকা


বিভিন্নমহল থেকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠার পর রাজাকারের তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বুধবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।তিনি জানান, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ওই তালিকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজয় দিবসের আগেরদিন ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে।

ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামও চলে আসে। এনিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি এই তালিকা সংশোধন করে নতুন করে প্রকাশের নির্দেশনা দেন।

এর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই তালিকাটি ১৯৭১ সালে করা। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করেছি মাত্র। এর কোনো কিছু পরিবর্তন করা হয়নি।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা নামে যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেটি আসলে রাজাকারের তালিকা নয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এটি কোনো স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা নয়, আলবদর, আল শামস এরও তালিকা নয়। দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা এটি।

নোট দেয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সবার নাম প্রকাশ করায় এর পুরো দায় ওই মন্ত্রণালয়ের।এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৫ ডিসেম্বর, রবিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়  স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা বলে উল্লেখ করে। ওই তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে। বিষয়টি প্রকাশে আসার পরই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর দুই মন্ত্রণালয় একে অপরের দিকে আঙুল তোলা শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর বেয়াই আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের নাম। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাই আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত।

ওই তালিকায় নাম উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘হক চাচা ‘ মজিবুল হকের। অথচ হক চাচা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তৎকালীন বরগুনা মহকুমা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন।

এ তালিকা দেখে তাতে আগুন দিয়েছেন বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর অশ্বিনীকুমার হলের সমানে এই প্রতিবাদ জানান তিনি।এর আগে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর মেয়ে ও শহীদ জায়া উষার নাতি মনীষা চক্রবর্তী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তী ও শহীদ জায়ার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা শুধু শহীদ পরিবারের জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব মানুষের জন্য লজ্জাজনক।

অথচ প্রথম ধাপের এ তালিকায় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীদের নাম নেই।

এর বাইরে আছে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার নাম, যাঁদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। নারী রাজাকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৩৮ জন। হিন্দুধর্মাবলম্বীর ৯২ জনের নামও এসেছে তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্যের নামও যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে।  

এস এস