ন্যাভিগেশন মেনু

দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছে ট্যারিফ কমিশন: ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন


বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন’র চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। ফলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রাখা, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা করা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা কিভাবে লাভ করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ট্যারিফ কমিশন। এছাড়াও দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রসারে এফটিএ এবং পিটিএ ও ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও বাড়াতে কাজ করছে কমিশন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কমে আসবে রপ্তানিমূখী খাতের প্রণোদনা। তাই এক্ষেত্রে সরকার উৎপাদনমূখী শিল্পগুলোকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়েও কাজ করছে কমিশন।

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের আয়োজনে ‘দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ।
 
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও কমিশনার অব কাস্টমস মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান। চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, কনফিডেন্স সিমেন্টের এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, বিএসআরএমের সিনিয়র ম্যানেজার আলী মাহবুব হোসেন, শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশের পরিচালক লোকপ্রিয়া বড়ুয়া, পর্যটন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ফ্রোজেন মিট ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এনায়েতুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল হক খান স্বপন,  বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান বক্তব্য দেন।  

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য হায়দার চৌধুরী।  
 ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, দেশে বিভিন্ন সংকটকালীনসময়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভোগান্তি হয় সাধারণ জনগণের, ভাবমূর্তি নষ্ট হয় সরকারের। তাই কারসাজীর মাধ্যমে কারা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তা উন্মোচন করতে ব্কল চেইন টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে বিষয়টি আলাপ-আলোচনা করে আমরা চট্টগ্রাম চেম্বারের সাথে এই বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী।   

বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন, যেকোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর। সরকার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতা থাকলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন হয় তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে আমদানি-রপ্তানি শুল্কহার কিরূপ হবে তা গবেষণার মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরে ট্যারিফ কমিশন।
 
তিনি বলেন, দেশের যেকোন নতুন উদ্যোক্তা বা শিল্পের জন্য এবং চাহিদানুযায়ী আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য আনয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে ডাটা ব্যাংক। এক্ষেত্রে কমিশন চাইলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ও রপ্তানিমূখী উৎপাদনশীল শিল্পগুলোর ডাটা ব্যাংক তৈরী করতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে কিভাবে রপ্তানির ঝুড়ি বৃদ্ধি করা যায় তা নিশ্চিত করা যাবে।     
 
কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন দেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন এবং হাইটেক পার্কে উৎপাদনমূখী শিল্পের এক ধরণের ট্যারিফ, আবার বাইরের এলাকাগুলোর শিল্পকারখানাগুলো এক ধরণের ট্যারিফ। ফলে দেশীয় শিল্পকারখানাগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই এই বিষয়টি কমিশনের পর্যালোচনা করা দরকার। এছাড়াও পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিসডিকলারেশনে ২০০-৪০০% পর্যন্ত যে জরিমানা করা হয় তা হ্রাস করার জন্য এনবিআরকে জানানো হয়েছে। আশা করি আগামী বাজেটে তার একটি প্রতিফলন পাওয়া যেতে পারে। তিনি হ্যাজার্ডাস পণ্য এবং বিপদজনক দ্রব্য ও রেডিয়েশন হয় এ ধরণের পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নীতি পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেন।    

চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, শিল্পায়ন ব্যতীত জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে বেসরকারি খাতে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে হবে। এছাড়া বৈশ্বিক ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে প্রতিযোগী রপ্তানিকারক দেশের সাথে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার ব্যবধান কমাতে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী  আরো কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে সরাসরি প্রণোদনা দেয়া না গেলেও পরোক্ষভাবে রপ্তানিমূখী শিল্পকে গবেষণা, টেকনোলজি, উদ্ভাবন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহমূলক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, রপ্তানী বাজার ধরে রাখা ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট ও প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট  স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে ঐ সকল দেশকে প্রাধান্য দেয়া উচিত যে সকল দেশের সাথে আমাদের পণ্য, সেবা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ রয়েছে। 

তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কারসাজিরোধ এবং বাজার মনিটরিং এর জন্য ব্লক চেইন টেকনোলজি ভিত্তিক কমোডিটি ট্রেডিং সফটওয়্যার তৈরীর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এতে আমদানিকারক হতে শুরু করে মজুদদার, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত পুরো সাপ্লাই চেইন একযোগে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে পারবে। কমিশন আগ্রহী হলে আগামী অর্থবছরে পাইলট  প্রকল্প হিসেবে চিটাগাং চেম্বার কাস্টমস অটোমেশন প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে এই পাইলট প্রকল্পেও সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারে।

চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, পর্যাপ্ত ডাটা না থাকার কারণে অনেকে চাহিদার চেয়ে বেশী আমদানি করে ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা। তাই আমদানির ক্ষেত্রে ডাটা ব্যাংক তৈরী এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সাথে ট্যারিফ কমিশনের কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করতে চট্টগ্রামে বিভাগীয় কার্যালয় চালু করার আহবান জানান। 

সভায় বক্তারা দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য সকল খাতে উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামালের ট্যারিফ যৌক্তিকিকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং যেসব পণ্যের আমদানি সংরক্ষিত আছে তা পর্যালোচনা করে সময়ে সময়ে আমদানি অনুমতি ও প্রয়োজনীয় সংকটকালীন সময়ে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কহার কমানোর বিষয়গুলো উত্থাপন করেন।