যারা বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে সবুজ প্রকৃতির হাওয়া লাগিয়ে আসার কথা ভাবছেন, তাঁরা চোখ বুজে ঘুরে আসতে পারেন অপার সৌন্দর্যের জল,পাহাড়, নদী, মেঘ ও পাথুরের ঝিরিপথ সমৃদ্ধ স্থান সিলেট।
আপনি যদি প্রকৃতির খুবই কাছাকাছি যেতে চান, মন ভরে স্বাদ নিতে চান সিলেটের অকৃত্রিম সুন্দর্যের, তাহলে আর দেরি নয়। চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন তিনটি স্থান; বিছানাকান্দি, পান্থমাই আর লক্ষণছড়া। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত-
বিছানাকান্দি:
বিছানাকান্দি সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুরে অবস্থিত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পর্বতমালার অনেকগুলো ধাপ দু’পাশ থেকে এসে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। আর পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে ভারতের মেঘালয়ের সুউচ্চ ঝর্নাধারা।
বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারি। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথর আর পাথর। যেন এটি একটি পাথরের বিছানা । এ এক অপরূপ সৌন্দর্য, যা আপনার শরীর ও মনের ক্লান্তি ও বিষন্নতা দূর করে দেবে।
মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্নার স্বচ্ছ শীতল জলধারায় আপানার পা ফেলে মনে হবে পৃথিবীর সকল প্রশান্তি-সুখ এখানেই। পাথর, নদী,পাহাড় ও শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি। আর স্বচ্ছ শীতল জলধারা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয় অসাধারণ এক মোহনীয় পরিবেশ। এই স্বচ্ছ জলধারার নিচে পাথরের পাশাপাশি নিজের শরীরের লোমগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।
পাহাড়ের কাছাকাছি এগোলে মনে হবে তা আকাশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সকল কৃত্তিমত্তা যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে হার মানে এটা তার প্রমান। এখানে আসলে যেসময় কিভাবে চলে যাবে আপনি তা বুঝতেও পারবেন না।
উপযুক্ত সময়ঃ
জাফলংয়ের মতো এটিও একটি খনি এলাকা। শীতকালে এখানে পাথর বোঝাই ট্রলার, ট্রাকের আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে ভ্রমণকারীদের সমস্যা হয়। তাই বিছানাকান্দিতে শুকনো মৌসুম থেকে বর্ষাকালই ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বৃষ্টির জলধারা পাহাড় থেকে নেমে এসে প্রচুর পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে। যার ফলে বিছানাকান্দি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়।
পান্থমাই ঝর্না:
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামের মধ্যে পান্থমাই একটি। গ্রামটি গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় ও পিয়াং নদীর তীর ঘেসে এই গ্রামের অবস্থান। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়ের গুহা থেকে বেয়ে আসা ঝর্না, দিগন্ত জোড়া চারনভূমি, হাঁটু জলের নদী , বাঁশ বাগান, মেঠোপথ সব মিলিয়ে অপরূপ সুন্দর একটি স্থান।
এখানে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারাটি পান্থমাই ঝর্ণা নামে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে একে ‘ফাটাছড়ির ঝর্ণা’ ও ‘বড় হিল’ ঝর্ণা নামেও ডাকা হয়।
পান্থমাই ঝর্নাটি ভারত সীমান্তের ভেতরে হলেও পিয়াং নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সীমানার ওই পাড়ে বিএসএফের ক্যাম্প থাকলেও বিজিবির কোন ক্যাম্প নেই। তাই সীমান্তের কাছে যাওয়াটা কিন্তু বিপদজনক। কয়েক’শ ফুট উপর থেকে তীব্র স্রোতে নেমে আসা এই জলপ্রপাত নিমিশেই আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।
লক্ষণছড়া:
গোয়াইনঘাট উপজেলায় পান্থমাই গ্রামের খুব কাছেই এই লক্ষণছড়া। পান্থমাই থেকে ফেরার পথে গ্রামের ঘাটে নৌকা রেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভারত সীমানার গা ঘেঁষে হেঁটে গেলে পেয়ে যাবেন লক্ষণছড়া।
এটি ভারতের ঝর্ণা থেকে নেমে আসা তৈরি পাথরের ঝিরিপথ। ভারত সীমানার ওই পাড়ে চলাচলের জন্য যে সেতু রয়েছে, তার নিচে ছোট বড় পাথর এসে জমে যা থেকে ঝিরিপথটি পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আর ভরা বর্ষায় হয়ে ওঠে অতুলনীয় সুন্দর।
ঢাকা থেকে সিলেট কিভাবে যাবেনঃ
বাসে:
ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, মহাখালী থেকে সকাল থেকে রাত ১২:৪৫ পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে যায়। এসি/নন এসি সব ধরনের বাস আপনি পেয়ে যাবেন।
এসি বাসের মধ্যে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী ও এনা পরিবহন অন্যতম। বাসের টিকেট ৮০০/১২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
নন এসির মধ্যে শ্যামলী, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস ও এনা পরিবহনের বাস প্রতিদিনিই ঢাকা থেকে সিলেট যায়। ননএসির টিকেট ৪০০/৪৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
ট্রেনে:
ঢাকা থেকে সিলেটে ট্রেনে যেতে আপনাকে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন বা বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উঠতে পারবেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস ও কালনী এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে। যাত্রাপথে সময় লাগবে সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘন্টা।
প্লেনে:
সময় বাঁচাতে বা যাত্রাকে আরামদায়ক ও সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে আকাশ পথ বেছে নিতে পারে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার ও ইউএস-বাংলার ফ্লাইট প্রতিদিন পাবেন। শ্রেণিভেদে ৩,২০০/ থেকে ৭,০০০/ টাকার মধ্যে টিকেট পেয়ে যাবেন।
সিলেট থেকে কিভাবে যাবেনঃ
বিছানাকান্দি যেতে আপনাকে সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্টে যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডে সিএনজি ষ্টেশন থেকে সিএনজি করে আসতে হবে হাদারপার বাজার। ভাড়া নেবে জন প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
হাদারপার বাজার থেকে বিছানাকান্দি –পান্থমাই – লক্ষনছড়া যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। এই তিনটি জায়গা ঘুরে দেখার জন্য ভাড়া পাবেন ১১০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। শুকনো মৌসুমে হেঁটে যেতে পারবেন। সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। তবে বর্ষাকালে নৌকায় যাওয়া উত্তম।
কোথায় থাকবেনঃ
সিলেট শহরে থাকার মতো অনেক ভাল মানের হোটেল আছে। আপনার চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী হোটেলে থাকতে পারেন। নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন, লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন, জেল সড়কে হোটেল ডালাস, ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন, আম্বরখানায় হোটেল পলাশ।
তাছাড়া, লাল বাজার ও দরগা রোডে হোটেল দরগা গেইট, হোটেল ঊর্মি, জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট, তালতলায় গুলশান সেন্টার অন্যতম। কম খরচে থাকার মতো অনেক হোটেল আছে। ভাড়া ৩০০/ থেকে ৩০০০/ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া নিরাপত্তাও ভালো।
নলজুড়ি উপজেলায় ডাকবাংলো আছে। যেখানে পূর্ব অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য রুম প্রতি ৫০০/ টাকা। আর সিভিলিয়ানদের জন্য ১৫০০/ টাকা।
এসএম/এডিবি
একই ধরণের সংবাদ পেতে এখানে ক্লিক করুন।