ন্যাভিগেশন মেনু

করোনার প্রভাব তৈরি পোশাক শিল্পে


করোনাভাইরাস প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পেও। করোনার কারণে পোশাক কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চিন থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি হতো সেগুলোর দাম দেশের বাজারে প্রায় চারগুণ বেড়েছে।

দেশের পোশাক খাতে যে কাঁচামাল আসে, তার ৬০ শতাংশই আসে চিন থেকে। আর নিটওয়্যার খাতের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল আসে দেশটি থেকে। এছাড়া প্রয়োজনীয় রাসায়নিক এবং খুচরা পণ্য ছাড়াও কাপড়, পলি, জিপার, রং ইত্যাদি আসে দেশটি থেকে।

তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, আগে অর্ডার করা কিছু কাঁচামাল আসা শুরু হলেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজার নিয়ে। কারণ এরই মধ্যে করোনাভাইরাস চীনের গণ্ডি পেরিয়ে আঘাত হানতে শুরু করেছে ইউরোপসহ ৫৭টি দেশে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বাজারের ঐতিহ্যবাহী সরবরাহকারীদের কাছে শক্তিশালী প্রতিযোগী বাংলাদেশ। পোশাক শিল্প খাতের ৬০ শতাংশ আয় আসে ইউরোপ থেকেই।

শিল্প উদ্যোক্ততারা বলছেন, এতোদিন চিন থেকে কাঁচামাল আসতে পারেনি। দেশটিতে দীর্ঘ ছুটি ছিলো পাশাপাশি করোনাভাইরাস যোগ হয়। তবে চিনের ছুটি শেষে দেশের বাজারে কিছুটা মালামাল আসতে শুরু করলেও শঙ্কা ইউরোপকে নিয়ে। ইউরোপে এ ভাইরাস ব্যাপক ভাবে ছড়ালে কোনো পর্যটক আসবে না, তাঁরা ঘর থেকেও বের হবেন না। এতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে এ খাতে। তবে করোনা সংকটে পোশাক খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কতো হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

চিনের সঙ্গে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট বাণিজ্য প্রায় ১৪.৬৮ বিলিয়ন ডলারের। পোশাক খাতে বিশেষ করে ওভেন খাতের কাঁচামালে ৬০% আসে চিন থেকে আর নীট খাতে প্রায় ২০% আসে চিন থেকে।

এছাড়া অন্যান্য অনেক শিল্পে কাঁচামালের প্রধান উৎস চিন। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অর্থনীতির ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু চেইনের ৮০ শতাংশের মত প্রায় একমাস স্থগিত ছিলো।


এ সময়ে খুব সামান্য পরিমাণ শিপমেন্ট হয়েছে। এ কারণে পোশাক খাত, প্লাস্টিক, চামড়া, ইলেকট্রনিক, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, কম্পিউটার, যোগাযোগসহ সব খাতে স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৬.৭২ লাখ টন পণ্য এসেছে অথচ ২০১৯ সালের একই সময় এর পরিমাণ ছিলো ৮.৫১ লাখ টন, ২০১৮ সালে ছিলো ৮.৮২ লাখ টন।

দেশের পোশাক রপ্তানি আয়ের ৬০ শতাংশ আসে ইউরোগীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৮টি থেকে। সল্পোন্নত দেশ হিসেবে এসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক দিতে হয় না। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক মাসের মতো আমদানি-রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটায় ব্যাংকিং খাতে পেমেন্ট ওভারডিও হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় ঋণপত্র সহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে কাগজপত্র সরবরাহ করলে তাদের অ্যাকাউন্ট যাতে ক্লাসিফাইড না হয় এজন্য এডিশনাল চার্জ, ইন্টারেস্ট পেনালাইজড না হয় এজন্য বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শঙ্কা এখন চিন নয়। কারণ দেশটি থেকে এখন পরিমাণে সামান্য হলেও কাঁচামাল আসতে শুরু করেছে। চিনের গন্ডি পেরিয়ে করোনা আঘাত হানতে শুরু করেছে ইউরোপসহ ৫৭টি দেশে। ইউরোপে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকার ধারণ করে তবে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কতো হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এর প্রভাব সব দেশেই লেগেছে, আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব বাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে। তবে আমাদের ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এক মাসের সাপ্লাই চেইন ডিসরাপশনের কারণে সরকারের সহায়তা, ব্যাংকিং সুবিধাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তা স্বল্প মেয়াদে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।’

সিবি/এডিবি


আরো পড়ুন: