ন্যাভিগেশন মেনু

ঘাসফুল দিয়ে বাইডেন তাঁর স্ত্রী’কে আর মমতা রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন


শুক্রবার একটি বিদেশি পত্রিকায় ছবি দেখেছিলাম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে ঘাসফুল দিয়ে ভালবাসা জানাচ্ছেন।তখনি আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রীর ছায়া হয়ে দেখা দিলেন কী জো বাইডেন।তবে কী তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

যেভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে পশ্চিমবঙ্গে। কে হারে, কে জেতে বোঝা মুসকিল্। তবে বিজয়ের শেষ হাসি হাসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যবাসীকে ঘাসফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফের এর ওপর আস্থা রাখতে বারতা দিলেন।   

মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীকে তাঁর দলীয় প্রতীক বাংলার মাঠে-ঘাটে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে ওঠা ঘাসফুল দিয়ে তৃতীয়দফায় শুভেচ্ছা জানালেন।

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয়বার প্রত্যাবর্তন কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিরোধীদের জন্য কড়া বার্তা বাহক হয়ে রইল। মাটি কামড়ে কীভাবে পড়ে থাকতে হয়, দিদি তা শিখিয়ে দিলেন। কখনও মমতাময়ী জননেত্রী হিসেবে তো কখনও অভিভাবক, আবার কখনও কড়া দলনেত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন।

সে আমফান হোক বা করোনার চোখ রাঙানি, আদর্শ ক্যাপ্টেনের মতোই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভবিষ্যতে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই যে কোনও রাজনৈতিক দলের জন্যই কড়া টক্কর, তা বলা এতটুকু অত্যুক্তি হবে না।

‘একপায়ে বাংলা দখল করব, আর দু’পায়ে দিল্লি’। গতমাসে ভোট প্রচারের জনসভা থেকে এভাবেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙা পায়েই ময়দানে নেমেছিলেন জননেত্রী।

কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের প্রচারের বিরুদ্ধে কার্যত একাই ২৯৪টি আসনে লড়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ওঠা গেরুয়া ঝড়কে বিধানসভা ভোটে একার নেতৃত্বে রুখে দিয়েছেন তিনি।

সেই দীর্ঘ লড়াই আর আত্মত্যাগের আজ মধুর ফল পেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপিকে অনেকখানি পিছনে ফেলে ম্যাজিক ফিগারের অনেক বেশি আসন নিয়ে আরও একবার বঙ্গে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করল মমতার তৃণমূল সরকার। আর দিদির কাছেই রইল বাংলা।

পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে এবার এই একুশের নির্বাচনের আগে অদ্ভুত এক দলবদলের আবহ তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের ঘরভাঙা নিয়ে একটা সময় দলের অন্দরেও চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামটাই যে বাংলার মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য যথেষ্ট  ছিল, তা তৃতীয়বারের জন্য প্রমাণ করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কপালে ঘাম জমলেও দলত্যাগীদের নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে দেখা যায়নি মমতাকে। বরং বলে দিয়েছিলেন, যাঁরা বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে না ভেবে, যাঁরা দীর্ঘ দশ বছর জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়েই লড়াই জিতবেন।

এমনকী নিজের গড় ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়ার চ্যালেঞ্জও স্বেচ্ছায় নিয়েছিলেন। যে ভূমি আন্দোলন থেকে তৃণমূলের উত্থান হয়েছিল, সেই মাটিতেই জয়ের নয়া ইতিহাস গড়ার শপথ নিয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী তথা পূর্ব মেদিনীপুরের ‘ঘরের ছেলে’ শুভেন্দু অধিকারীকে হারিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছুই নয়। দিনের শেষে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুকে ১২০৭ ভোটে হারিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন মমতা।

দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে ইতিহাস গড়েছিলেন মমতা। ২০১৬ সালে সবুজ ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। সেই মমতা সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে এবার একের পর এক বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এসে বঙ্গে প্রচার করেছেন।

খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৮টি সভা করে গিয়েছেন। কিন্তু মমতার জনপ্রিয়তা, তাঁর প্রতি রাজ্যবাসীর বিশ্বাস, আস্থা-ভরসাকে টলাতে পারেননি শাহ-নাড্ডা-স্মৃতি ইরানিরা।

কেন্দ্রীয় শক্তির চোখ রাঙানিকে কখনওই ভয় করেননি তিনি। বরং ভাঙা পা নিয়েই মিটিং-মিছিল, জনসভা চালিয়ে গিয়েছেন। দশ বছর পরও বিধানসভা ভোটে তিনিই ফ্যাক্টর, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল। দেশের একমাত্র মহিলা ‘মুখ্যমন্ত্রী’ যে ভারতীয় রাজনীতির সেরা নক্ষত্রদের মধ্যে অন্যতম, তা নিয়ে আর কোনও দ্বিধা রইল না।

চূড়ান্ত ফলাফল এখনও ঘোষণা হয়নি। এখন পর্যন্ত ২১২টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। বিজেপি মাত্র ৭৮টি আসনে এগিয়ে। বিজেপি–র আর ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই।

এদিকে নিজের জমি শক্ত করে ফেলেছে তৃণমূল। দুপুরের মধ্যেই সেই বিষয় স্পষ্ট। তাই মমতাকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে দিলেন একের পর এক বিরোধী নেতারা।

এস এস