ন্যাভিগেশন মেনু

টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে: গবেষণা


করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি অথবা ফাইজার-বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত যেকোনো একটি টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।

এই গবেষণা নিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, দ্য অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (ওএনএস) এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা উভয় টিকা থেকে সব বয়সের মানুষের মধ্যে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি খুঁজে পেয়েছেন।

তারা বলেছেন, দুটি টিকার নেওয়ার পর সবার মধ্যে কার্যকর প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তবে গবেষণাটি নিয়ে এখনো পর্যালোচনা হয়নি। এটি প্রকাশিতও হয়নি। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গবেষণা।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যে ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে এটি করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লোকদের রক্ষা করতে যে কার্যকর তা আরও বাস্তব প্রমাণ দেয় এই গবেষণা।

প্রথম গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ কম।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাদের ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর উপসর্গসহ করোনার সংক্রমণ ৭৪ শতাংশ কমেছে। আর উপসর্গবিহীন করোনার সংক্রমণ কমেছে ৫৭ শতাংশ।

যারা ফাইজারের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি ৯০ শতাংশ কমেছে। তবে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে এ তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, টিকাদান কর্মসূচি দেরিতে শুরু হওয়ায় খুব অল্পসংখ্যক মানুষ এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পেরেছেন।

আমরা এখনো জানি না, অ্যান্টিবডি কত দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে তা জানা যাবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক সারাহ ওয়াল্কার

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ক্যান্ট ভেরিয়েন্টের (বি ১১৭) বিরুদ্ধে দুটি ভ্যাকসিনই কার্যকর ছিল।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র গবেষক ড. কোয়েন পোয়েল বলেন,  তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। 

তিনি বলেন, 'টিকার একটি ডোজ নেওয়ার পর করোনার নতুন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু হ্রাস করার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। এ ব্যবধান ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে।'

গবেষক পোয়েল আরও বলেন, টিকা নেওয়ার পরও মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। তাদের থেকে অন্যরাও এতে সংক্রমিত হতে পারে। এ কারণে তিনি সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।

দ্বিতীয় সমীক্ষায় প্রায় ৪৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চালানো হয়। যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন তাদের সব বয়সের মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডিগুলির শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এই টিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, এটি তার প্রমাণ। 

গবেষকেরা বলছেন, এই অ্যান্টিবডি ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের শরীরে কার্যকর থাকতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের তুলনায় এর কম বয়সীদের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেশি কার্যকর। ফাইজারের দুটি ডোজ সব বয়সীদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। 

গবেষণায় পাওয়া আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য হলো, কম বয়সীদের তুলনায় ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ফাইজারের টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রতিরোধব্যবস্থাকে বেশি কার্যকর করতে পারে।

তবে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে অ্যান্টিবডিগুলি তৈরির অর্থ কী, তা এখনও পরিষ্কার নয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক সারাহ ওয়াল্কার বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, অ্যান্টিবডি কতোদিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে তা জানা যাবে।’

উভয় সমীক্ষা কোভিড-১৯ সংক্রমণ জরিপ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ওএনএস এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা বিভাগের মধ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।

এডিবি/