ন্যাভিগেশন মেনু

তিস্তার পানি বৃদ্ধি, ভাঙনে বিলীন বসতভিটা ও ফসলি জমি


তীব্র ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের উলিপুরের তিস্তাপাড়ের মানুষ। গত এক মাসের ব্যবধানে তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবাবের বসতভিটা, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট, পাঁকা রাস্তা ও ফসলি জমি।

উপজেলাগুলোর মধ্যে গোড়াইপিয়ার, থেতরাই পাঁকার মাথা, নাগড়াকুড়া টি-বাঁধ, চর বজরা, পূর্ব বজরা, পশ্চিম বজরা, কাশিম বাজার, লকিয়ার পাড় এলাকায় ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আরও নানান স্থাপনা।

চলতি মাসে ভারী বর্ষণ ও উজানি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তীব্র স্রোতে ভাঙন তীব্র থেকে তীব্র আকার ধারন করেছে। তিস্তার ভাঙনে চোখের সামনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বাপ-দাদার বসতভিটা, বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।

উপজলায় নদী ভাঙন দেখা দিলেও কয়েকদিন ধরে ভাঙনের মুখে পড়েছে থেতরাই গোড়াইপিয়ার এলাকা। ভাঙনের হুমকির কবলে ওই এলাকার গোড়াইপিয়ার মুলাধোয়া জামে মসজিদ, গোড়াইপিয়ার পিয়ারি দাখিল মাদরাসা, গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদসহ গোড়াইপিয়ার কমিউনিটি ক্লিনিক।

এমন ভাঙন অব্যাহত থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে গোড়াইপিয়ার মুলাধোয়া জামে মসজিদটি ভেঙে যাবে বলে শঙ্কিত এলাকাবাসী। প্রিয় বসতভিটা, ফসলি জমিসহ ওই সব প্রতিষ্ঠান ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে এলাকার শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ সবাই মিলে গাছের গুল, ডালপালা ফেলে স্রোতের দিক পরিবর্তন করতে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

তিস্তাপাড়ের আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, চাঁদ মিয়া, আজিজ মন্ডল, আবু বক্কর, আকরাম মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, গতবছর কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক  ভাঙন রোধে ৩৯০ মিটার এলাকায় প্রায় ১৫-১৬ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছিল সেগুলো এখন অধিকাংশই নদীর মাঝে।

এলাকাবাসী অতিদ্রুত  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট  ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

থেতরাই ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের সাবেক ইউপি সদস্য ও চারটি প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য নূরন্নবী সরকার (৭০) অশ্রুসিক্ত চোখে সাংবাদিকের বলেন, আমার কষ্টে অর্জিত সম্পদে গড়া গোড়াইপিয়ার মসজিদ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক আমার জীবদ্দশায় নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে তা ভাবতেই কষ্টে বুকফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যর্থ হলে ইতিহাস ঐতিহ্যর গোড়াইপিয়ার নাম থেতরাই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। সেই সাথে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানগুলো নদীগর্ভে বিলীন হবে।

তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন, কিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যায় এবং এলাকাটি ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তারা  এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তারা শিঘ্রই ভাঙন রোধে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। অতিদ্রুত ভাঙন রোধে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসআই/এস এ/এডিবি/