ন্যাভিগেশন মেনু

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে খুশি সুবিধাভোগীরা


চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ভিখারী মঞ্জুরা বেগম। সরকারের দেওয়া নতুন বাড়ি পেয়েছেন তিনি। স্বামীকে নিয়ে তার ছোট সংসার। ভিক্ষা করে যা আয় রোজগার হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে তাদের।

মঞ্জুরা বেগম জানান, 'গত ১১ বছর আগে আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয়। তারপর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করার পর স্বামী-স্ত্রী মিলে ভিক্ষা করে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। আমাদের কোন জায়গা-জমি নেই। রেলের যায়গায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করি।'

তিনি আরও জানান, 'সরকারের দেওয়া নতুন ঘর পেয়ে খুব খুশি আমি। ঘরটা খুব সুন্দর। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।'

পাশের বাড়ির দিনমজুর ৬০ বছর বয়সী লাল্টু মিয়াও শেষ বয়সে পেয়েছেন নতুন ঘর। তার দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে মূলত তার সংসার।

লাল্টু মিয়া জানান, 'আমার এক কাঠাও জমি ছিল না। এখন শেষ বয়সে আমার মাথা গোজার ঠাঁই হলো। কেউ আমাকে আর ভূমিহীন বলতে পারবে না। ঘর পেয়েছি সাথে জমিও পেয়েছি। আমি শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।'

রঙিন টিনের ছাউনিতে নতুন বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে উঠেছেন আরেক দিনমজুর চান্দু মিয়া। তিনি জানান, 'আমি কখনও ভাবিনি আমার বাড়ি ঘর হবে।  সরকারিভাবে যে ঘর দেওয়া হয়েছে তা দেখতে অনেক সুন্দর। এক ঘরেই রান্না ঘর, বাথরুম সবকিছু রয়েছে।'

এসএসসি পরীক্ষার্থী মাফুজ সরদার জানান, 'আমার বাবা দিনমজুর। আমরা খড়ের ঘরে থাকতাম। ঘর বাড়ি না থাকায় আমার লেখাপড়া করতে খুব কষ্ট হতো। এখন নতুন ঘর পেয়েছি। তাই মনোযোগসহকারে পড়াশোনা করতে পারছি।' নতুন ঘর উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামে মোট ৭টি পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। নতুন ঘর পেয়ে আনন্দ উল্লাস করছে সুবিধাভোগীরা। 

এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় ৫৬ ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় পরিবারের সদস্যদের হাতে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. আলী আজগার টগর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরের দলিল তুলে দেন।

এ প্রসঙ্গে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মুনিম লিংকন বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রবিবার জীবননগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ৫৬ পরিবারের মধ্যে ২ শতক করে জমি এবং বাড়ির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়। এরমধ্যে উথলী ইউনিয়নে ৭টি, রায়পুর ইউনিয়নে ৩টি, কেডিকে ইউনিয়নে ১টি, সীমান্ত ইউনিয়নে ১৯টি, বাঁকা ইউনিয়নে ৫টি এবং আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে ২১টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছেন।

তিনি আরও জানান, গৃহহীন পরিবারের জন্য খাস জমিতে দৃষ্টিনন্দন সেমিপাঁকা ঘর নির্মাণের কাজ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি সেমিপাঁকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। সরকারি নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী সবগুলো ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরে দুটি সেমিপাঁকা কক্ষ, রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট, বিদ্যুৎ, নলকূপসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া এই পরিবারগুলোর অতীতের গল্প ভিন্ন হলেও সামনের দিনগুলোর ভাবনা তাদের প্রায় একই রকম। সবাই নিজের ঘরে একটু স্বস্তির জীবনের স্বপ্ন দেখছেন।

এসকে/ ওয়াইএ/এডিবি/