ন্যাভিগেশন মেনু

রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভেষজ ব্যবহার


আমরা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিহত করতে ব্যবহার করি  অ্যান্টিবায়োটিক। তবে উঠতে-বসতে এত ওষুধ খাওয়া মোটেই হিতকর নয়। ন্যাচারাল উপায়ে রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এবং তা শ্রেয়। কোন কোন ভেষজে রয়েছে সেই গুণ? তাই সংবাদ প্রতিদিনকে জানালেন কলকাতার আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডা.প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র।

বাইরে থেকে ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস যখন শরীরে প্রবেশ করছে, তখন তাকে বধ করতে অ্যান্টিবায়োটিকই একমাত্র হাতিয়ার। তবে এতে ইনফেকশন কমলেও, এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

তাই প্রাকৃতিক উপায়ে যদি এই ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলা যায়, তবে শরীরে তার প্রভাব স্বাস্থ্যকর। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বলছে, ১০ জনের মধ্যে একজন অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেবনের দরুণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন।

কারও অ্যালার্জি, কারও হজমের সমস্যা। আয়ুর্বেদ মতে, বেশ কিছু ভেষজ রয়েছে, যেগুলি সারাবছর খেয়ে যেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, আর কিছু রয়েছে রোগ বিশেষে দারুণ কাজ করে।

জ্বর-সর্দি-কাশি:

তুলসী– তুলসীপাতায় উপস্থিত বিশেষ ধরনের অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার যা জ্বর, সর্দিতে দারুণ কাজ দেয়। তুলসীপাতা উষ্ণ বীর্য উপাদান সমৃদ্ধ, অর্থাৎ শরীরে শ্লেষ্মাবিনাশে উপকারী।

বাসকপাতা– শুকনো কাশি কমাতে, জমে থাকা কফ বের করে দেয়, কাশির সঙ্গে রক্তপাত হলে তা নিরাময়ে বাসকপাতার রস বা পাতা ফোটানো জল খুবই উপকারী। লিভারের জন্যও খুব ভাল।

দারুচিনি– কোভিড প্রতিহত করতে আয়ুশ ক্বাথের একটি অন্যতম উপাদান হল দারুচিনি। শুধু কোভিড নয়, যে কোনও রোগজীবাণু প্রতিহত করতে পারে। সরাসরি জীবাণুকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও ধরনের সংক্রমণ বিনাশে কার্যকর।

লবঙ্গ: গলাব্যথা বা গলায় ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন হলে তা প্রতিহত করে। গলাব্যথা, টনসিল বা ফ্যারিনজাইটিস, ল্যারিনজাইটিসের সমস্যায় উপশম দেয়। দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন কমায়।

পিপুল: এই ফলে উপস্থিত ‘পাইপারিন’ উপাদান অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল। গলা, ফুসফুসের সংক্রমণ বিনাশ করতে কাজ করে। এটি ইমিউনো মডিউলেটর। মধু দিয়ে পিপুল চূর্ণ অল্প মাত্রায় দিনে দু’বার খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

গোলমরিচ: জ্বরনাশক। যে কোনও ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশন কমায়। পেট ভাল রাখতে কালমেঘ– কালমেঘ পাতা লিভারের জন্য যেমন ভাল পাশাপাশি পেটের যে কোনও সংক্রমণ প্রতিহত করতে কার্যকর। জ্বরও কমায়।

থানকুনি পাতা: আমাশয়, জিয়ার্ডিয়ার জীবাণু মারতে সাহায্য করে। রোজ এই পাতা ১০টি চিবিয়ে খান। শিশুদের ক্ষেত্রে থেঁতো করে হাফ চামচ রস এই ধরনের সমস্যা দারুণ কাজ করে।

বিড়ঙ্গ: এই বীজের চূর্ণতে উপস্থিত অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান। শরীরের যে কোনও ধরনের রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। গরম জলে বিড়ঙ্গ চূর্ণ দিয়ে পান করুন।

হরিতকী: পেটের মধ্যে জমে থাকা বায়ু বের করে দিতে পারে। পেট ফাঁপা কমাতে অতি কার্যকর। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। পেটের নানা রকম জীবাণুনাশ করতে সক্ষম। হজমশক্তি ঠিক রাখে ও শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হরিতকী গুঁড়ো গরম জলে দিয়ে রাতে পান করুন।

পলাশবীজ: পলাশফুলের বীজও অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল ভেষজ। প্রাপ্তবয়স্করা ছোট চামচে এক চামচ করে দিনে দু’বার খেলে উপকার মিলবে। পেটের যে কোনও ইনফেকশন বা ডায়েরিয়া প্রতিহত করে।

আদা:  আদা খেলেও শরীর গরম থাকে, যা শরীরের জীবাণুকে বিস্তারলাভ করতে দেয় না। শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকক্ষমতা বাড়ায়।

চিতা: চিতাগাছের মূলের শুকনো চূর্ণ উষ্ণ জলে গুলে অথবা জলে ফুটিয়ে খেতে পারেন। এতে পেটের আম বা অতিসার কমে।

আনারস পাতা: এই পাতার নিচের দিকের সাদা অংশ রস করে খেলে পেটের কৃমি বা প্যারাসাইটকে ধ্বংস করে।

কুড়চী ছাল: এই ভেষজে ‘কুর্চিন’ নামক উপাদান রয়েছে। অ্যামিবিয়েসিস, ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি বা পেটে আমাশয় হলে তা প্রতিহত করে কুড়চী ছাল। এই ছালের চূর্ণ সেবন করলে কাজ দেবে।

বেল শুঁট: এতেও রয়েছে অ্যান্টি অ্যামিবিক উপাদান। এই বেল শুকিয়ে, চূর্ণ করে খেতে হবে।

মুথাঘাস: এই ঘাসের কন্দ পেটের যে কোনও ইনফেকশনে মহৌষধ।

দারুহরিদ্রা: এতে ‘বারবেরিন’ নামক অ্যালকালয়েড রয়েছে। যা পেটের জন্য ভাল।

সর্বসংক্রমণ নাশে

হলুদ: এতে অ্যান্টি ফাংগাল ও অ্যান্টি প্যারাসাইটিক উপাদান ‘কার্কিউমিন’ রয়েছে। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও রক্তকে পরিশুদ্ধ করে।

আমলকী: পেটের রোগ কমাতে কাজ করে। যে কোনও ধরনের ক্রনিক ইনফেকশনকে প্রতিহত করে।

আদ্রক শুঁট (শুকনো আদা): এর গুঁড়ো বা শুঁঠ ফোটানো জল অ্যান্টিবায়োটিক গুণ সমৃদ্ধ। সকল সংক্রমণ রোধক ও নাশক। 

ঘরে-বাইরে সহজলভ্য নিম। অপরিসীম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সমৃদ্ধ। গাছের পাতা, ছাল কিংবা ফল, সব কিছুতেই ঔষধিগুণ বর্তমান।

ত্বক, দাঁতের সংক্রমণকে বাগে আনে পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাসকেও প্রতিহত করে নিমপাতা। রোজ খান। রক্তকেও পরিশুদ্ধ করে ভিতর থেকে শরীরকে সুস্থ রাখে। সব বয়সেরই ন্যাচারাল অ্যান্টিবায়োটিক।

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন, কলকাতা

এস এস