ন্যাভিগেশন মেনু

লকডাউনে এনজিও'র কিস্তির চাপে দিশেহারা ঋণগ্রহীতারা


‘ঢাকা যাইতে পাইতাছিনা কিস্তি দিমু ক্যামনে। তোরা বাইত্তে (বাড়ীতে) যায়য়া পইরা মরগা আমাগো দেখার সময় নাইগা। কাল সকালে তোর বাড়ীতে কিস্তি নেইম। কাগজ বাহির কইরা দেখায় সরকার আমাগো/ওবায়দুল কাদের লিখিত কইরা দিছে ডায়রেক্ট বলে এসিল্যান্ড আসবে কাগজ দেখামো, পুলিশ আসবে কাগজ দেখামো, সিআইডি আসবে কাগজ দেখামো, ভিডিও করি নেটে ছাড়বেন, ছবি তুলি ভর্তা করি খান।’

হতাশা, আবেগে আর উৎকন্ঠা নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধামশ্রেণী ইউনিয়নের বিষ্ণুবল্লভ এলাকার নিরাশা।

চলতি কঠোর লকডাউনের পরিস্থিতি জানতে চাইলে এভাবেই হাতিয়া ইউনিয়নের সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিস (এসএসএস) এনজিও'র এক মাঠ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি।

তার সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেন মুকুল মিয়া, সাহিদা বেগম ও লাইলী বেগম।

শুধু নিরাশা কিংবা মুকুল মিয়া ও সাহিদা বেগম নয়; এমনও হাজারো মানুষ চলমান কঠোর লকডাউনে এনজিও'র ঋণ ও বীমার কিস্তির নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি সকল অফিস বন্ধ থাকার কথা। সড়ক ও নৌপথে সকল ধরণের যন্ত্রচালিত গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দারিদ্র পীড়িত এ জেলার বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ বিভিন্ন এনজিও জালে আবদ্ধ। লকডাউন মানতে গিয়ে এসব মানুষের আয় রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরইমধ্যে অনেক এনজিও তাদের প্রদেয় ঋণের কিস্তি আদায় করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। মানুষের আয় বন্ধ হলেও, বন্ধ হয়নি এনজিও'র কিস্তি আদায়।

উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিহীন, নিম্নআয় ও পেশাজীবীদের ঋণ দেয় এসএসএস, ব্র্যাক, আরডিআরএস, আশা-সহ বিভিন্ন এনজিও। এসব প্রতিষ্ঠান সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে কিস্তি আদায়ের নামে ঋণ গ্রহীতাতের চরম হয়রানিতে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নআয়ের পেশাজীবী ঋণগ্রহীতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিস্তি আদায় করছেন। অনেকে ঋণগ্রহীতাদের মোবাইল ফোনে কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন, কিংবা আগামী দিন কিস্তির টাকা আদায় করতে আসবেন বলেও জানান দিচ্ছেন।

এসব এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া সদস্যদের বেশির ভাগই দরিদ্র। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ঋণগ্রহীতা এই নিম্নআয়ের পেশাজীবীরা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিওর কর্মীরা।

হাতিয়া ইউনিয়নের সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিস (এসএসএস) এনজিওর এক মাঠ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমাদের কাগজ দেওয়া হয়েছে। ২৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধ চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কিস্তি আদায় করছি। আমরাতো সেভাবে কিস্তির চাপ দিচ্ছি না। যারা দিতে পারছে তাদের কিস্তি নেওয়া হচ্ছে।'

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, লকডাউনে কিস্তি তোলার কোন নিয়ম নেই। লকডাউন বাস্তবায়নে অনেকের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে যদি কেউ চাপ প্রয়োগ করে কিস্তি আদায় তাহলে বিষয়টি অমানবিক। জোর করে কিস্তি আদায়ের বিষয়টি আমাদের অবগত করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

এসআই/সিবি/এডিবি/