সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। শোকে আকুল দলের বাকি সদস্যরা। টানা তিনদিন ধরে মৃত সন্তানের দেহ আগলে ঠায় দাঁড়িয়ে শোকপালন করল হাতির দল।
এ পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা জলপাইগুড়ির বৈকন্ঠপুর বন বিভাগের গৌরীকোণ এলাকার। বনকর্মীদের ভিডিওটি নিমেষে ভাইরাল। তাদের এই শোকজ্ঞাপনের চিত্র দেখে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর গৌরীকোণ এলাকা। নদীর চরে বাদাম, ভুট্টা চাষ করেন চর এলাকার বাসিন্দারা।
প্রতি বছরই সেই শস্য খেতে হাতির পালের হানা প্রায় রুটিনে পরিণত হয়েছে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। নদীর চরে ভুট্টা, বাদাম খেতে একপাল হাতি হানা দেয় গৌরীকোণ এলাকায়। পেটপুরে খাওয়াদাওয়ার পরও হাতির দলকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। টানা প্রায় দু’দিন এই দৃশ্য চোখে পড়ায় সন্দেহ হয় বনকর্মীদের। ব্যাপারটা কী? তা বুঝতে স্পেশ্যাল ড্রাইভ করে হাতির দলটিকে দু’ভাগে ভাগ করে বৈকন্ঠপুর এবং কাঠামবাড়ি জঙ্গলের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
হাতির পাল চলে যেতেই ঘাসজমির উপর দেখা যায়, পড়ে রয়েছে এক শাবকের মৃতদেহ। শাবকটি স্ত্রী হাতি। বনকর্মীদের অনুমান, তিনদিন আগে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে আনুমানিক চার বছর বয়সী স্ত্রী হস্তি শাবকটির।
মনে করা হচ্ছে, সন্তানের এই আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে হাতির দল। তাই তার দেহ আগলে দাঁড়িয়েছিল তারা। শনিবার সকালে তাদের তাড়িয়ে হস্তিশাবকের দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। নদীর চর থেকে পাড়ে এনে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় দেহটি। এরপর সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর।
তবে এভাবে টানা তিনদিন সন্তানের দেহ আগলে দাঁড়িয়ে হস্তিকূলকে শোকপালন করতে দেখে রীতিমত অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগে কখনও এমন দৃশ্য তাদের চোখে পড়েছে বলে মনে করতে পারেন না তাঁরা।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত্যু নিয়ে গজরাজেরা দল একটু বেশিই স্পর্শকাতর। দলের কোনও সদস্যের প্রাণহানি ঘটলে, তা বুঝতে পারলে শোকে পাথর হয়ে যায় তারা। প্রিয়জনকে কিছুতেই দল ছেড়ে এভাবে চলে যেতে দিতে পারে না। তাই মৃতদেহ ঘিরে ধরে আগলে রাখার চেষ্টা করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে হাতির বাসস্থান, সেসব জঙ্গলে এই দৃশ্য স্বাভাবিক। কখনও মৃত হাতিদের কবরস্থলে গিয়েও তারা ভিড় করে। সবটাই আসলে তাদের শোকজ্ঞাপন প্রক্রিয়া।
জলপাইগুড়ির জঙ্গলেও এবার দেখা গেল সেই দৃশ্য।
এস এস