ন্যাভিগেশন মেনু

সব সংকট মোকাবিলা করে চলচ্চিত্র শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : তথ্যমন্ত্রী


চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক সংকট আছে। কিন্তু সব সংকট মোকাবিলা করে চলচ্চিত্র শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে  বলে জানিয়েছেন  তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র উৎসব- ২০২৩ এর উদ্বোধন করে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ উৎসবের আয়েজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক সংকট আছে। কিন্তু সব সংকট মোকাবিলা করে চলচ্চিত্র শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়াচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকগুলো হল আবার চালু হয়েছে। আরও অনেকে নতুন হল করার জন্য বিশেষ করে সিনেপ্লেক্স করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন করে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ এবং পুরোনো হল আধুনিকায়নের জন্য অনেকগুলো আবেদন জমা পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারি আমাদের জীবন থেকে প্রায় তিন বছর সময় কেড়ে নিয়েছে। পুরো পৃথিবী এ সময় স্থবির হয়ে গিয়েছিল, অর্থনীতি স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এর ভেতর মানুষ হলে যাবে কিনা সেই শঙ্কায় ছিলেন হল মালিকরা। সম্প্রতি কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার এখন সেই শঙ্কা কেটে গেছে। মানুষ করোনার ভয়কে জয় করে সিনেমা দেখার জন্য হলে লাইন ধরেছে। যে লাইন ধরাটা আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল। সেটি আবার শুরু হয়েছে।

ভারতের কলকাতা শহরে বাংলাদেশি সিনেমা দেখার জন্য এক কিলোমিটার লাইন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেটি অভাবনীয়। আমরা কখনো ভাবিনি, কলকাতা শহরে এমন একটি সাড়া পড়বে বাংলাদেশি সিনেমা দেখার জন্য।

তিনি আরও বলেন, গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।কোনো কোনো জায়গায় করোনা মাহামারি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করে প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্বোধন করেছেন। ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই মেট্রোরেল চালিয়েছে একজন নারী। মেট্রোরেল চালনোর কাজে ছয়জন নারী চালক আছে। অর্থাৎ দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন এ দেশে হয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে।

সিনেমা শিল্পের সুদিন ফিরে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত বছর দেশে ৭০টির বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এ বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে সে আশা করি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করলেও আমাদের স্বাধীনতা তখন পূর্ণতা পায়নি। স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে, যেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, মানুষ কারাগার থেকে মুক্তি পেলে পরিবার পরিজনের কাছে ছুটে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কারগার থেকে মুক্তি লাভ করে এসে পরিবারের কাছে যাননি। তিনি গেছেন জনতার কাছে। ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে তিনি গেছেন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জনতার কাছে। সেখানে তিনি জনতার সঙ্গে দেখা করে, জনতার সঙ্গে কথা বলে তারপর গেছেন পরিবারের কাছে।

বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা বিরোধীরা হত্যা করেছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন শুধু স্বাধীনতা ছিল না। তার স্বপ্ন ছিল দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটি করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯. ৫৬ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এ হারেই আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারতাম প্রতি বছর।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের থেকে পশ্চাৎপদ দেশ ছিল। সিঙ্গাপুর তখন মাত্র মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হলে এবং সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকতো, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এমনকি সিঙ্গাপুরের আগে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প শুনতো পৃথিবীর মানুষ।

তিনি আরও বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদলে গেছে এবং যাচ্ছে। আইএমএফ’র সর্বশেষ প্রতিবেদন হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন ৩৫তম অর্থনীতির দেশ জিডিপিতে। কোনো কোনো সমীক্ষার তথ্যমতে, পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম। জিডিপির আকার অনুযায়ী এখন মালয়েশিয়া আমাদের পেছনের অর্থনীতির দেশ।

তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশ ছিল ৬০তম অর্থনীতির দেশ। আজকে সেটি ৩৫তম তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া জিডিপির আকারে আমাদের চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ৷ পাকিস্তান তো বটেই৷ কিন্তু এ খবর গণমাধ্যমে যেভাবে প্রশংসা হওয়া দরকার, সেভাবে হয় না। বাংলাদেশ কোনো সূচকে পিছিয়ে গেলে, সেটি গণমাধ্যমে যেভাবে ফলাও করে প্রচার হয়, এগিয়ে গেলেও সেভাবে প্রচার হওয়া প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, চলচ্চিত্র জীবন, মানুষ, সমাজের কথা বলে। চলচ্চিত্র মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়। চলচ্চিত্র দেশ গঠনে, সমাজ গঠনে, সমাজকে পরিশোধিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বাচসাস ৫৩ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।

বাচসাসের সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন, অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস, জোতিকা জ্যোতি ও অভিনেতা নরেশ ভূঁইয়া। উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাচসাসের সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ।

দিনব্যাপী এ চলচ্চিত্র উৎসবে চিরঞ্জীব মুজিব, মেঘের পরে মেঘ, গেরিলা ও শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রের প্রদর্শন করা হয়।