ন্যাভিগেশন মেনু

সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র তারকাদের শোক


ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরেণ্য এ অভিনেতাকে হারিয়ে অনেকে শোক প্রকাশ করছেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত চলচ্চিত্রপাড়া।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘মৃত্যু চিরন্তন সত্য। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। এমন গুণী শিল্পীর চলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গন একজন গুণী শিল্পী হারিয়েছে। আমরা হারিয়েছি একজন সত্যিকারের ভালো মানুষকে। পরিচালকদের পক্ষ থেকে আমরা শোক প্রকাশ করছি।’

সাদেক বাচ্চুর স্মৃতির কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে ওমর সানী লিখেন, ‘সাদেক বাচ্চু একটা নাম, একজন অভিনেতা, একটা ইতিহাস। বহু বছর আগে হুমায়ুন ফরীদি ভাই যখন সুপারস্টার তখন তার শিডিউল পাওয়া ভিষণ দুষ্কর। পরিচালক উত্তম আকাশ দাদা এবং আমি চিন্তা করলাম কি করা যায়। বাচ্চু ভাইয়ের কাছে গেলাম। আমাদের কথা শুনে বাচ্চু ভাই বললেন উত্তম তুমি আমার সাথে মজা করছো, তোমার ছবিতে নিবা আমারে ওমর সানির সাথে। আমি বললাম না বাচ্চু ভাই, আপনি থাকবেন। সেই আখেরি হামলা, মুক্তির সংগ্রাম, রঙিন রংবাজ, আরো বহু ছবি একসাথে জুটি হলাম। আমার কাছে মনে হতো একটা ভালো মানুষের ডিকশনারি তিনি।’

সাদেক বাচ্চুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে সানী আরও লেখেন, ‘আপনি চলে গেলেন আমাদেরকে রেখে। আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন। এবার বুঝি আমাদের পালা। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে। ক্ষমা করবেন। বাচ্চু ভাই আমার জীবনের ছবি হয়ে থাকবেন।’

এ দিকে শুটিং সময়ের কিছু স্মৃতি শেয়ার করে চিত্রনায়িকা বুবলী তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘আংকেল, আমার প্রায় প্রত্যেকটি সিনেমাতেই সৌভাগ্য হয়েছিলো আপনার সাথে অভিনয় করবার। শুটিং এর ফাঁকেই একটু সুযোগ হলে কত কত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন, নানান সিনেমার গল্প বলতেন আর তার মাঝখানেই আবার বলতেন “মামনি, তোমার আন্টিকে একটা ফোন দিয়ে নেই দাঁড়াও , কথা বলো আন্টির সাথে, একদিন বাসায় এসে আন্টির সাথে দেখা করে, গল্প করো, ভালো লাগবে”। আন্টির সাথে ফোনে কথাও হয়েছিলো, যাবোও বাসায় বলেছিলাম কিন্তু আপনিই তো চলে গেলেন আংকেল।’

সাদেক বাচ্চুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় এই নায়িকা লেখেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রসহ আমরা সবাই একজন অভিজ্ঞ গুণী শিল্পীকে হারালাম। ভালো থাকবেন আংকেল!’

এদিকে সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুর খবর শুনে আরিফিন শুভ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা আরো একজন রত্ন হারালাম। উনি উনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যা দিয়ে গেছেন, তা রিপ্লেসেবল না। অন্য কারো বা কিছুর মাধ্যমে রিপ্লেস করা যাবে না। একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।’

আরিফিন শুভ আরও বলেন, ‘উনি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন, আমার সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসতেন। আমার সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব গভীরভাবে গল্প করতেন। আমি দেখেছি, উনি কীভাবে নীরবে সহশিল্পীদের সাহায্য করতেন। অনেকে বলে-কয়ে করে, কিন্তু উনি নীরবে সহশিল্পীদের সাপোর্ট করতেন। আমার চোখে ভাসছে উনার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা। কারো সঙ্গে উনার কোনো ঝামেলা ছিল না। আমি তো দুদিন এসেছি এই ইন্ডাস্ট্রিতে। অন্য যে কারো কাছ থেকে শুনে দেখবেন, উনার সঙ্গে কারো মনোমালিন্য আছে-এ ব্যাপারেও আমার সন্দেহ আছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।’

পাঁচ দশকের লম্বা ক্যারিয়ারে মঞ্চে, বেতারে, টিভিতে, সিনেমায়, সর্বত্র দাপুটে বিচরণ ছিল তার। নব্বইয়ের দশকে এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয়ের পর সাদেক বাচ্চু জনপ্রিয়তা পান খলনায়ক হিসেবে।

১৯৬৩ সালে খেলাঘরের মাধ্যমে রেডিওতে অভিনয় শুরু করেন সাদেক বাচ্চু। একইসাথে মঞ্চেও বিচরণ করেন। প্রথম থিয়েটার ‘গণনাট্য পরিষদ।’ ১৯৭২-৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যখন এদেশের সাংস্কৃতিক বলয় নতুনভাবে তৈরি হচ্ছিল, তখন যোগ দেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১৯৭৪ সালে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিষিক্ত হন।

সাদেক বাচ্চুর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘জীবন নদীর তীরে’, ‘জোর করে ভালোবাসা হয় না’, ‘তোমার মাঝে আমি’, ‘ঢাকা টু বোম্বে’, ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘এক জবান’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘বধূবরণ’, ‘ময়দান’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রিয়জন’, ‘সুজন সখি’ ইত্যাদি।

সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম ঢাকায়। সিনেমার কিংবদন্তি মানুষ এহতেশাম 'চাঁদনী' চলচ্চিত্রে তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু করে দেন। সেই থেকেই তিনি এ নামে পরিচিত। টিএন্ডটি নাইট কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন সাদেক বাচ্চু।

ওয়াই এ/এডিবি