ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০২৪ পালিত

দেশে রাজস্ব আদায়ে সিংহভাগ অবদান রাখছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস: এনবিআর সদস্য ড. মইনুল


ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সভা-সেমিনার ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০২৪ পালন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মিলে নবীন-পুরনো অংশীজন/কাস্টমস করবে লক্ষ্য অর্জন' (Customs Engaging Traditional and New Partners with Purpose)। বাংলাদেশ কাস্টমস নবীন-পুরনো অংশীজনদের মধ্যে মেল বন্ধন স্থাপনের বিষয়টির গুরুত্বারোপ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসটি পারল করছে। 

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারী) সকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস অডিটোরিয়ামে কাস্টম চট্টগ্রাম অঞ্চলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি'র কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্য (মূসক: বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপীল) কমিশনারেট মো: মোয়াজ্জেম হোসেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সৈয়দ মুসফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো: শাহাদাৎ হোসেন শিকদার, চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক এ কে এম আকতার হোসেন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সহ-সভাপতি এম এ মাহবুব চৌধুরী, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  আবিদা মুস্তাফা উপস্থিত ছিলেন। 
 
এছাড়াও কাস্টমসের বিভিন্ন অংশীজন, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী কমিশনার সুলতানুল আরেফিন ও আফরিন জাহান নাওমিন।  
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ড. মইনুল খান বলেন, সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও কাস্টমস দিবস পালন করছে। রাজস্ব আদায়ের বড় কেন্দ্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কাস্টমস শুধু রাজস্ব আদায় করে না, একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখে। ২৮ শতাংশ রাজস্ব কিন্তু কাস্টমস থেকে আসে। কিন্তু বর্তমানে রাজস্ব কমে যাচ্ছে, তবুও কাস্টম হাউজ সার্বিকভাবে অবদান রাখছে। শুল্কায়নে হয়রানি পরিহার করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা হবে। 

ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কম সময়ে তাদের পণ্যটা ডেলিভারি করতে পারে  সে ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিতে হবে। রাজস্ব আদায়ে বিভিন্ন বড় উদ্যোগ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামে অনেক মদ ও বিভিন্ন মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। এসব যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য কাস্টমসের চৌকস টিম কাজ করছে প্রতিনিয়ত। আমদানি-রপ্তানি মাধ্যমে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ করতে পারলে আরো অগ্রগতি ঘটবে। চোরাচালান বন্ধ রাখতে সবসময় সর্তক থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, এখানে ৮ হাজার ডকুমেন্টেশন হয়। সে তুলনায় জনবল ও অবকাঠামো কম। রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে বিশাল রাজস্ব আহরণ হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল সংকটের বিষয়টা আমাদের চিন্তাতে আছে, এটি অচিরেই অবসান হবে। আমাদের কম সময়ে পণ্য খালাসে রাজস্ব বোর্ডের একটা উদ্যোগ রয়েছে। 

এটা সিঙ্গেল এন্ট্রি মাধ্যমে সব ডকুমেন্ট কার্যক্রম শেষ করা হবে। খুব তাড়াতাড়ি এটি চালু হলে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানিতে সহজ হবে।  ভ্যাট ও কাস্টমস সাথে বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস একসাথে কাজ করে। পণ্য উৎপাদন যথাযথ হলে আয়কর ও ভ্যাট আদায় বাড়বে।  রাজস্ব আদায়ে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে রাজস্ব আদায়ের বড় জায়গা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিরোধ, দেশি শিল্পের বিকাশসহ কাস্টমসের অনেক দায়িত্ব। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্ব আহরণ। দেশের ২৮ শতাংশ রাজস্ব আসে কাস্টমস থেকে। কাস্টমসের মূল ফোকাস এখন ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন। দেশে অটোমেশনে কাস্টমস পাইওনিয়ার। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে নতুন কাস্টম হাউস ভবন নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ভ্যাট কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সুখি ও সমৃদ্ধি দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যাবো। রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে। পৃথিবীর পরিবর্তন হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। কাস্টমস দিবসে আমরা দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে থাকি। আমাদের চেষ্টা থাকবে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। এ যাত্রা হবে সম্মিলিত-সমন্বিত।

চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো: শাহাদাৎ হোসেন শিকদার বলেন, কাস্টমস সাথে কর বিভাগের সম্পর্ক রয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে কাস্টমস আমাদের সহায়তা করে থাকেন। কন্টেইনার স্ক্যানার ক্ষেত্রে আরো ডিজিটাল করবে আশা করি। কাস্টমস কার্যক্রম সম্পূর্ণ ডিজিটাল হলে সঠিক শুল্কায়ন সম্ভব হবে। কাস্টমস এ ব্যাপারে জোড় দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক এ কে এম আকতার হোসেন বলেন, বর্তমানে ডলার সংকট ও নতুন এলসি খোলা না হলে রাজস্ব বাড়ানোর টার্গেট পূরণ করতে কষ্ট হবে। তবুও গার্মেন্টসের কার্যক্রম চলছে। আমরা ব্যবসায়ীগন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরনে কাজ করে যাচ্ছি। তবুও প্রধানমন্ত্রীর গৃহিত পদক্ষেপ পালনে সবসময় ব্যবসায়ী সমাজ ঐক্যবদ্ধ। রাজস্ব আহরনে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কাস্টম হাউজ, আমরা তাদের কাজের প্রতি প্রশংসা করছি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সহ-সভাপতি এএম মাহাবুব চৌধুরী বলেন, দেশে দিনে ১৭ হাজার বিল অব এন্ট্রি হয়। এটির সাথে বৈদেশিক মুদ্রা জড়িত। সীমিত জনবল দিয়ে এসব সামাল দিচ্ছে কাস্টমস।  

সভাপতির বক্তব্যে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কাস্টমস ১৯৯৬ সাল থেকে অ্যাসাইকুডা ব্যবহার করছে। এটি দেশের তথ্যভাণ্ডার। কাস্টমস বর্ডার প্রটেকশনের কাজও করছে। অ্যাসাইকুডা নিয়ে সরকার থেকে শুরু করে সবাই তথ্য নিয়ে থাকে।  সরকার আমাদের যে লক্ষ্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও সবাই সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন "স্মার্ট জনবল"। 

স্বাগত বক্তব্য দেন কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন যুগ্ম কমিশনার মো. নাহিদুন্নবী। অতিথিদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মো. সাকিব হোসেন, ইসলামুল হক, মো. রাশেদুল হক, মোস্তফা কামাল, মো. আতিকুর রহমান, সৌরভ দত্ত বিজয়, মো. রিজওয়ান আলম, সাইদুর রহমান মুন্না।