ন্যাভিগেশন মেনু

ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে করণীয়


ইদানীংকালে মধুমেহ অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে অন্তত একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে পরিসংখ্যাণে উঠে এসেছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে জানিয়েছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ।

২০৪৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে দেড় কোটিতে দাঁড়াবে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমতে।  ডায়াবেটিস হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে অন্যান্য রোগে ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগী হার্ট, কিডনি, ব্রেইন ও স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক সময় টেরও পান না যে, তার শরীরে কঠিন রোগ বাসা বাঁধছে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চেকআপে থাকতে হয়। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা ৩ মাস পরপর করতে হয়। আবার কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলো প্রতি বছরে একবার করে করতে হয়।

৩ মাস পরপর যে পরীক্ষা করবেন: রক্তের সুগার পরীক্ষা (HbA1C test)। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার রক্তে থাকা সুগারের গড় পরিমাণ বের করা হয়। এভাবে আপনার সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার কতটা কাছাকাছি তা নির্ধারণ করা যায়। আপনি নতুন করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে প্রতি ৩ মাস পরপর এই পরীক্ষাটি করাতে হবে। এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও ৬ মাস পরপর এই পরীক্ষা করতে হবে।

বছরে একবার যেসব পরীক্ষা করবেন: পায়ের অবস্থা কেমন।  ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে যেকোনো সময় সামান্য ঘা থেকে পচন হতে পারে! কারণ ডায়াবেটিস হলে পায়ে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে পায়ের যেকোনো অংশ অবশ হতে পারে। এর ফলে পায়ে কোনো আঘাত পেলে বা ঘা হলে তা সেরে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়।

অনেক সময় এসব ক্ষত বা ঘা থেকে পায়ে আলসার বা ইনফেকশনের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনার দুই পায়ে ঠিকমতো বোধ পাচ্ছেন কি-না অর্থাৎ স্পর্শ, ব্যথা, ঠাণ্ডা-গরম ইত্যাদি অনুভব করতে পারছেন কি-না, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সেইসঙ্গে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে, পায়ের কোনো অংশ অবশবোধ করছেন কি-না। এ ছাড়াও পায়ে কোনো ধরনের ক্ষত, আলসার বা ইনফেকশন দেখা দিয়েছে কি-না সেদিকেও খেয়াল রাখুন। এমন কিছু হলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

চোখ: ডায়াবেটিস হলে রোগীর চোখের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। এর ফলে অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে।

তাই প্রতি বছরে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করতে হবে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই আপনার চোখের সমস্যাটি ধরে ফেলা যাবে। চোখের রক্তনালির সমস্যার দ্রুত চিকিৎসা করা হলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমনকি চোখে ঝাপসা দেখলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল ও কিডনি: ডায়াবেটিস হলে উচ্চ রক্তচাপসহ হার্টের বিভিন্ন রোগ বা কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব রোগ অনেকটা নিরবে শরীরে বাসা বাঁধে।

তাই নিয়মিত ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল ও কিডনি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে, আপনি সুস্থ আছেন কি-না। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার মাধ্যমে জটিলতার সমাধান করা যায়।

দাঁতের পরীক্ষা: ডায়াবেটিস রোগী মাড়ির বিভিন্ন রোগেও ভুগে থাকেন। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে মাড়ির সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ছয় মাস অন্তর নিয়মিত ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ দ্বারা দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কোতে হবে। পাশাপাশি দৈনিক ফ্লসিং এবং ব্রাশ করতে হবে। মুখের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।

এস এস