ন্যাভিগেশন মেনু

ঢাকায় বৈরি আবহাওয়া, গরমেও ঠোট ফাঁটে


ঢাকায় এখন এক অকাল কাণ্ড ঘটছে। দেখা যাচ্ছে গ্রীষ্মকালেও মানুষের ঠোঁট ফাটছে। সাধারণত আমরা দেখি শীতকালে ঠোঁট ফাঁটে। অথচ  এ বছর গরমেও ঠোঁট ফেটে যাচ্ছে। আবার ঢাকার তাপমাত্রা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা দেখাচ্ছে তার চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেশি অনুভূত হচ্ছে।

অস্বস্তিকর এ আবহাওয়ায় অনেকেই এ সমস্যায় ভুগছেন। ঠোঁট ফাঁটা এবং আসল তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অনুভবের ঘটনা দেশের গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে অধিক ঘটেছে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ঢাকায়ই এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

তুলে ধরা  তাপমাত্রা বাস্তব তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। জানা গেছে, ভূমি থেকে তাপ বিকিরণই এর পেছনে দায়ী। ঢাকার রাস্তার বিটুমিন গরম হয়ে নিচ থেকে তাপ ছাড়ছে। অন্যদিকে শহর বোঝাই বহুতল ভবনের কারণে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার স্থান কমে গেছে। এসব ভবনও তাপ বিকিরণ করছে।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি কম থাকায় তা বেশ শুষ্ক। ফলে মানবদেহের ত্বক থেকে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়েছে এবং ফেটেছে ঠোঁট।

বাস্তবতার চেয়ে অনুভূত তাপ বেশি কেন এ বিষয়ে  আবহাওয়াবিদরা উপরোক্ত কারণের সঙ্গে আরও দুইটি বিষয় তুলে ধরেছেন। তাহলো ঢাকায় জলাশয়ের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেছে। একারণে বাড়ছে তাপ। ঢাকার আশেপাশে বহু কলকারখানা আছে। এসব থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হচ্ছে। মিথেন অনেক তাপ ধরে রাখে এবং বায়ুমণ্ডলে অধিক সময় থাকে। ফলে নিচের দিকে ভূমির কাছাকাছি জায়গায় তাপ সরে যেতে না পেরে জমে থাকছে।

কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের আকাশে অস্বাভাবিক মিথেনের উপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ। তাদের দাবি ছিল- ধানক্ষেত, ময়লা আবর্জনার ভাগাড় বা ল্যান্ডফিল, কয়লার মজুদ, পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বের হয়ে আসা ইত্যাদি থেকে বেড়েছে মিথেন।

স্যাটেলাইট ফটো বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গের সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তবে তখন দেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এখনো প্রতিবেদনটি তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত নয়।

এবছর এখন পর্যন্ত অন্তত সাতটি তাপ প্রবাহ বা হিট ওয়েভ বয়ে গেছে দেশের ওপর দিয়ে বলে জানিয়েছে, আবহাওয়া অধিদপ্তর। হিট ওয়েভ প্রতিবছর সমান সংখ্যায় হয় না, কম-বেশি হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর হিট ওয়েভের সংখ্যা অস্বাভাবিক নয়।

মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে সূর্যকিরণ উল্লম্বভাবে বাংলাদেশের ওপর পড়ে। এতে গরমের পরিমাণটা বাড়ে। অনেকসময় বৃষ্টিপাত কম থাকলে জুনের প্রথমার্ধেও হিট ওয়েভ হয়। পাশাপাশি এসময় ভারতের থর মরুভূমি, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি অঞ্চল থেকে গরম বাতাসের প্রবাহ বাংলাদেশের দিকে আসে। পাশাপাশি উল্লম্ব সূর্যকিরণ এবং কম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয় হিট ওয়েভ।

গ্রাম ও শহরে অনুভূত তাপের পার্থক্য থাকে। ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৩৬। গ্রামে একটা মানুষ ৩৬ ডিগ্রি তেমন অনুভব করবে না। সেখানে গাছপালা ও জলাশয় অনেক। কিন্তু ঢাকা শহরে রাস্তা দিয়ে যখন হাঁটলে অনুভূত হবে চারদিক থেকে একটা গরম ভাপ লাগছে।’

যখন বাতাস বেশি শুষ্ক থাকে তখন ঘাম কম হয়, ত্বক থেকে বাষ্পায়ন হয়ে যায় দ্রুত। যখন বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে তখন বাষ্পায়নটা ধীরগতির হয়। তখন অস্বস্তি বেশি লাগে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হচ্ছে বর্ষাকাল। এসময় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এসময় অস্বস্তির পরিমাণও বেশি।

গতবারের তুলনায় এবার বাতাস বেশি ড্রাই ছিল। এতে একদিক থেকে উপকারই হয়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৬, ৩৭ এমনকি ৩৮ পর্যন্ত উঠেছে কিন্তু অস্বস্তি তেমন হয়নি।’

এস এস