ন্যাভিগেশন মেনু

দেশের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মিথেন গ্যাস


বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম । বাংলাদেশ বাতাসে মিথেন নিঃসরণে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস, যা প্রথম দুই দশকে কার্বন-ডাই অক্সাইডের চেয়ে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ কার্যকর।

প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরোস এসএএস নামের প্রতিষ্ঠান এ বছর সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণের ১২টি হার শনাক্ত করেছে। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এর সব ঘটনাই বাংলাদেশে ঘটেছে।

জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন বলেছেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই মিথেন নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে এর উৎস স্পষ্ট শনাক্ত করতে পারিনি।’

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ডাটা পর্যালোচনা করে ব্লুফিল্ড টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওপরে বিপুল পরিমাণ মিথেনের মেঘ দেখতে পায়। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের ওপরে মিথেনের ঘনত্বটা শনাক্ত করে।

এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়োতাম এরিয়েল বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ বিষয়টি স্যাটেলাইটেই শনাক্ত করা যায়।

মিথেন গ্যাসের উৎস কোনটি তা চিহ্নিতের কাজ সবেমাত্র শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্য থেকে এ পর্যবেক্ষণ হতে পারে মৌসুমী। অর্থাৎ মৌসুমভেদে এর পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

এর কারণ, মেঘের আচ্ছাদন, বৃষ্টিপাত ও আলোর তীব্রতার ভিন্নতা। সমুদ্র থেকে নিঃসরিত গ্যাস শনাক্ত করা স্যাটেলাইটের জন্য কঠিন হতে পারে। এসব গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে আর্কটিকের মতো উচ্চতর অক্ষাংশে।

আর্কটিকে রাশিয়ার রয়েছে তেল ও গ্যাস পরিচালনার বড় কর্মযজ্ঞ। এর ফলে সীমিত ডাটা পাওয়া যাচ্ছে, যার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক সার্বিক পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে যে মাত্রায় মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এর কম উচ্চতা এবং জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব এ দেশটিকে চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিপন্ন করে তুলেছে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ার বর্তমানে বাংলাদেশ। এ ফোরামের ৪৮টি সদস্য দেশে রয়েছেন ১২০ কোটি মানুষ। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এসব সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবহিত। মিথেনের সবচেয়ে বড় অংশ আসছে ধানক্ষেত থেকে। কৃষকরা যখন তাদের জমিতে সেচ দিয়ে ভাসিয়ে দেন, তখন মাটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে গ্যাস নিঃসরণ করে।

এ গ্যাসের আরেকটি উৎস হলো মাটিতে থাকা বা খনিজ গ্যাস। উপরের বিভিন্ন জিনিসের স্তর ভেঙে যাওয়ার ফলে এসব গ্যাস উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টিকে প্রশমনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

গৃহপালিত পশু, তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের লিক, ভূমিতে আবদ্ধ গ্যাস এবং কয়লা খনি হলো মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকাণ্ড, যা থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হয়।’ বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের কমপক্ষে এক চতুর্থাংশের জন্য মনুষ্য সৃষ্ট মিথেন নিঃসরণ দায়ী বলে মনে করে এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড।

কিরোস এসএএসের মতে, ধানক্ষেত, মাটিতে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাসলাইনে লিক এবং কয়লাখনি থেকে বাংলাদেশের মিথেন নিঃসরণ হয় বেশি। কিরোস এসএএস এসব কথা বলতে গিয়ে ইএসএ’র সেন্টিনেল-৫পি এবং সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করেছে।

এস এস