ন্যাভিগেশন মেনু

নাড়ীর টানে গতি, রুখিবে কার সাধ্য


করোনা সংক্রমণ ও মাত্রাতিরিক্ত মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে এবার ঈদ ফিতর  উৎসবে রাজধানী ঢাকার মানুষদের গ্রামের বাড়ি ফিরতে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে এবার আন্ত:জেলা বাসসহ সকল যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু কথায় আছে, বাঙালি ঘরমুখো। তাঁদের কাছে নাড়ীর টান বড় টান। সে তো স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের কাছে যেতে নৌকা না পেয়ে প্রমত্তা হুগলি নদী পরযন্ত সাঁতরে পার হতে পিছপা হননি।

শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়- রীতিমতো পথে পথে ও নৌঘাটে পুলিশ ও আধাসামরিক সদস্য বিজিবি মোতায়েন করেও ঘরমুখো মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে মুন্সীগঞ্জের  মাওয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাট, ঢাকার অদূরে পাটুরিয়া ফেরিঘাট, টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাবার পথসমূকে  পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

 তার পরও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নাড়ির টানে পুলিশ-বিজিবির বাঁধা উপেক্ষা করে গত কয়েকদিনের মতো আজ  রবিবারও বাড়ি ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।ঘরমুখী মানুষ রোগি সেজে অ্যাম্বুলেন্স,ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ছুটছে নিজ নিজ গন্তব্যে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু দূরপাল্লার বাসও চলাচল করছে। রবিবার ভোর থেকে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় বিজিবি মোতায়েন করা হয় ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার গন্তব্য পথে।

আজ  সকালে বিআইডব্লিউটিসি মানুষের চাপ সামাল দিতে পাঁচটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একটি ফেরি ফরিদপুর শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছাড়ে। এ সময় বিপুল পরিমাণ মানুষ গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠে পড়ে।

ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরাও আরেক ঈদ আনন্দ তাদের কাছে। পথে পথে পুলিশ-বিজিবির চেকপোস্ট থাকা ঢাকা থেকে মানুষ ছুটছে গ্রামের বাড়িতে। পাটুরিয়া ঘাটে লোকজনের চাপে এমন কাণ্ড ঘটে যে, ছাড়ার আগে ফেরির ডালা উঠানোও যাচ্ছিলো না।

এসময় পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে ফেরির ডালা উঠানোর কোনরকম ব্যবস্থা করে। কিন্তু গাদাগাদি অবস্থায় ছোট ফেরিটিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেড় সহস্রাধিক মানুষ পদ্মা পাড়ি দিল।

এরপরে ফেরি শাহ পরান ঘাটে আসলে হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে উঠে যায়। ৫ সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ফেরিটি ছেড়ে যায়। এই ফেরিতেও তিল ধারনেরও জায়গা ছিল না। তবে এখনো হাজার হাজার যাত্রী পারাপারের অপেক্ষায় আছে। সবখানেই ভিড়। সবখানে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব উপেক্ষিত। সরকারি নিয়মের কোন বালাই নেই।

ফেরিঘাটের আশপাশে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জেলে নৌকাসহ ট্রলারে যাত্রীরা পদ্মা পার হওয়ার চেষ্টা করে। নৌপুলিশ এ পর্যন্ত ১২টি নৌকা আটক করেছে।

অরথাৎ করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও লোকজন নাড়ির টানে ছুটছেন, কোন বাঁধাই মানছেন না। বহরের ১৬ ফেরির মধ্যে জরুরি পরিষেবায় ২-৩ টি ফেরি চলাচল করছে।মুন্সীগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় ইদে ঘরমুখো না হওয়ার জন্যই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তারপরও লোকজনের ঢল নামছে, তাই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এস এস