ন্যাভিগেশন মেনু

মৈত্রীতে মাওয়া হয়ে কলকাতা পৌঁছানো যাবে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়: রেলমন্ত্রী


আর মাত্র এক বছরের অপেক্ষা। এরপরেই পূরণ হবে কাঙ্খিত স্বপ্ন। আগামী বছর জুনে শেষ হবে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ। আর রেলসেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের মার্চে। আগে যেখানে মৈত্রীরেলে করে ঢাকা বা কলকাতা, কিংবা কলকাতা থেকে ঢাকা যাতায়াতে সময় লাগতো কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা। সেখানে তিন বছর বাদে রেলসেতু চালু হলেই এই দূরত্ব অতিক্রমে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। মিডিয়াকে এমনটাই জানালেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। অপরদিকে ত্রিপুরার আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা যেতে রেলে সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা। বর্তমানে রেলে করে আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে ৩০ ঘণ্টার অধিক। এখন শুধু অপেক্ষা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার। বাংলাদেশের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শুধু বাংলাদেশ কেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির সিংহভাগ নাড়ী এই বাংলাদেশ। নানা কাজে বাংলাদেশের লোক যেমন কলকাতা গিয়ে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ পদ্মাপাড়ে এপার বাংলায় এসে থাকেন। সাড়ে ৩ ঘন্টায় যোগাযোগ স্খাপিত হলেই উপকৃত হবেন বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের নাগরিকরা। বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রী মো: নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতুতে বাসের পাশাপাশি রেললাইন যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ রেল লাইন থাকলেও পূর্বাঞ্চলের রেললাইনসমূহ মিটার গেজ। এজন্য দেশের পূর্বাঞ্চলে সমস্ত মিটার গেজ রেললাইন ব্রডগেজ ডুয়েল রেললাইন করা হচ্ছে। এমনটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ তো বটেই ভারতের সঙ্গেও আমাদের ট্রেন যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তণ ঘটবে। ইউরোপের মতোই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা অথবা অন্য কোনও রাজ্যে যাওয়া যাবে ট্রেনে। বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সীমান্ত স্টেশন দর্শনা, এরপর নদীয়ার গেদে হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ২৮০ কিলোমিটার ও ভারতের মধ্যে ১২৯ কিলোমিটার। কিন্তু, পদ্মায় রেল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল জেলা ও যশোর হয়ে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বনগাঁও জংশন হয়ে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার। মোট ২৫১ কিলোমিটার রেলপথ যেতে সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। এরপর বেনাপোল পার হয়ে হরিদাসপুর ঢুকলেই বিদ্যুৎ জালিত ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হবে। কাস্টম আগের মতোই ঢাকায় ও কলকাতা স্টেশনেই সারা হবে। ভারতীয় ঋণ সহাতায় ঢাকার কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট ডুয়েল রেল লাইন নির্মিত হচ্ছে। ভারতীয় অনুদানে বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা সীমান্ত পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ কাজও চলছে। এছাড়া এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কসহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ সহায়তায় আরও কয়েকটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। রেলপথ মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার বর্তমানে মিটারগেজ লাইন রয়েছে। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক- এডিবি টঙ্গী থেকে আগাউড়া ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের সমীক্ষা চালাচ্ছে। আর টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল লাইন ডুয়েল গেজসহ ডাবল লাইন হলে আগরতলা স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে কলকাতা ২৫১ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে বাংলাদেশ অথবা ত্রিপুরার মানুষের ছয় ঘণ্টার বেশি লাগবে না। ভারতের সঙ্গে মোট ৯টি রেলওয়ে ক্রস বর্ডার রয়েছে। এর সবগুলি চালু হলে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তণ আসবে। ইউরোপের ন্যায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা বা অন্য যেকোনও রাজ্যে চলাচল করা যাবে ট্রেনে। যা পর্যাক্রমে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াও সম্প্রসারণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। ভারতে ব্রড গেজ রেল লাইন। ভারতের সঙ্গে আমাদের রেল যোগাযোগ বাড়লেই আমরা লাভবান হবো। কারণ আমাদের রেলপথের দৈর্ঘ কম। তাই ভারতের সাথে যাত্রবাহী ও পণ্যবাহী রেল যোগাযোগ বাড়ালে রেল খাতে আমাদের বিনিয়োগ উঠে আসবে। ঢাকার মাওয়া পয়েন্ট ও মাদারীপুরের জাজিরা পয়েন্টে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের স্বপ্নের পদ্মা মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি কোটি টাকা। মূল পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। সেতুটির সড়ক যোগাযোগ ২০২২ সালের জুনেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে, পদ্মা রেলসেতু নির্মাণ কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায়, রেলসেতুর কাজও শেষ হতে পারে ২০২৪ সালে।

এস এস